শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কবে থেকে অপরাধ?

ছবি: স্টার

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় গত সোমবার ভোরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ ঘুমন্ত বিক্ষোভকারীদের ‘পশুর মতো’ লাঠিপেটা করেছে, তাদের দিকে টিয়ারশেল ছুঁড়ে মেরেছে এবং জলকামান চালিয়েছে,  আহত হয়েছে প্রায় ৫৪ জন।

তাদের মধ্যে ছিলেন তাজরীন ফ্যাশনসের সাবেক শ্রমিকেরা। যারা ২০১২ সালে কারখানাটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও চিকিত্সার দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন। সেখানে আরও ছিলেন এ ওয়ান বিডি লিমিটেড নামে আরেকটি কারখানার বরখাস্ত শ্রমিক এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকেরা। প্রত্যেকেই নিজেদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় ধরে সেখানে বিক্ষোভ করছিলেন। ফুটপাত থেকে তাদের জোর করে সরিয়ে দেওয়ার সময় নারী শ্রমিকদের পোশাক ছিঁড়ে গেছে বলেও তারা জানিয়েছেন। এমনকি পুলিশের হামলা থেকে রেহাই পায়নি প্রবীণ ও শিশুরাও।

তাজরীনের শ্রমিকরা, যারা তাদের ও তাদের সহকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন, তাদের সমস্যার কথা বলতে এসেছিলেন যেসব শোনা ও তার আশু সমাধান জরুরি ছিল, অথচ ৮০ দিন ধরে সেগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। রাষ্ট্র এবং তাদের পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যদি ঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে এতদিন ধরে এই শ্রমিকদের ফুটপাত দখল করে থাকতে হতো না। পরিবর্তে যা করা হয়েছে তা আসলে তাদের ব্যর্থতা এবং অদক্ষতাকে স্পষ্ট করে তোলার প্রতিশোধ হিসেবেই করা হয়েছে। দুর্বলকে আঘাত করে শক্তিমানদের স্বার্থরক্ষার জন্যই করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে পুলিশ দীর্ঘকাল ধরেই এই ধরনের বিচার বহির্ভূত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখন সময় হয়েছে হয় রাষ্ট্র পুলিশ বাহিনীর কাজের সংজ্ঞা নতুন করে লিখুক না হয়, জনগণের কাছে এটি স্পষ্ট করুক যে সংবিধানে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ নিষিদ্ধ কি না।

সোমবারের ওই ঘটনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রীতি ও ঐতিহ্যের বিপদজনক স্খলনের কথাই আবার মনে করিয়ে দেয়। নাগরিকদের অধিকার আছে তাদের অভিযোগ, কষ্টের কথা জানানোর এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেসব আমলে নেওয়া। যদিও কিছু বিষয় আছে যা নিরসন করা সময়সাপেক্ষ, তবে যুক্তি দিয়ে বোঝানো ও কার্যকর আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সোমবার কী হয়েছিল সরকারকে অবশ্যই তার জবাব দিতে হবে এবং বিক্ষোভকারীদের দাবি পূরণে দায়িত্ব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এর উপায় বের করতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি বর্বরতা অবশ্যই বন্ধ হতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus promises election on time

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday reaffirmed his commitment to holding the 13th national election in the first half of February next year.

7h ago