করোনাভাইরাস

রোগ সবার, ভ্যাকসিন শুধু ধনীদের!

করোনা ভ্যাকসিন বাজারে এলে বাংলাদেশে নয় শতাংশ মানুষ তা পেতে পারেন বলে জানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা স্পিডোমিটার।
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

করোনা ভ্যাকসিন বাজারে এলে বাংলাদেশে নয় শতাংশ মানুষ তা পেতে পারেন বলে জানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা স্পিডোমিটার।

সংস্থাটির প্রকাশিত জনপ্রতি ভ্যাকসিন প্রাপ্তির দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে কানাডা।

স্পিডেমিটারের তথ্যানুযায়ী, উত্তর আমেরিকার এই ধনী দেশটিতে ৬০১ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আরও ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি চলমান।

সংস্থাটির হিসাবে, কানাডার পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৪৪২ শতাংশ মানুষের জন্যে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আরও ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি চলছে।

তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের রয়েছে ৪১৯ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা।

এরপর, অস্ট্রেলিয়া ২৬৭ শতাংশ মানুষের জন্যে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে উল্লেখিত সংখ্যক মানুষের সবার জন্যে ডোজ কেনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংস্থাটির ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রয়েছে ২৪৬ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির রয়েছে ২২২ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা। দেশটি ইতোমধ্যে সেই পরিমাণ ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিচারে ১১৭ শতাংশ মানুষের নিশ্চয়তা নিয়ে নিউজিল্যান্ড রয়েছে চিলির পরের অবস্থানে।

কম সংখ্যক মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে তুরস্ক ও কুয়েত। দেশ দুটিতে ১২ শতাংশ করে মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এরপর, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে কাজাখস্তান (১৩ শতাংশ), পেরু (১৫ শতাংশ), লেবানন (১৫ শতাংশ) ও ভেনেজুয়েলার (১৮ শতাংশ)।

আজ শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিন মজুদ করছে। অথচ বাকি দেশগুলোর জন্যে যথেষ্ঠ পরিমাণ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে  প্রতিবেদনে  বলা হয়েছে, ভারত এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ১৬০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন অগ্রিম কেনার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু, এই সংখ্যক ডোজ দিয়ে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এই দেশটির ৫৯ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে।

ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির দিক থেকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বেশি আয়ের দেশগুলো যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন কিনে রাখছে যাতে সে সব দেশের সব মানুষকে প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিকবার ভ্যাকসিন দেওয়া যায়।

অথচ, উন্নয়নশীল ও গরিব দেশের মানুষের জন্যে যথেষ্ঠ পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই।

সমীক্ষা মতে, করোনা ভ্যাকসিন বাজারে এলে তার অধিকাংশই চলে যাবে ধনী দেশগুলোতে।

এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন ডোজের সংখ্যার দিক থেকে ভারতের পরে রয়েছে ইইউ’র অবস্থান। সেখানে অন্তত ছয়টি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র কিনেছে ১১০ কোটি ডোজ।

যুক্তরাষ্ট্রের পর বেশি সংখ্যক ডোজ কিনেছে ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স কোভ্যাক্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্য।

সমীক্ষা মতে, জনসংখ্যার বিবেচনায় কানাডা তার দেশের মোট জনগণের পাঁচ গুণের বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে।

ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায়ও বলা হয়েছে, কানাডা ভ্যাকসিন কিনেছে তার জনসংখ্যার ৬০১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র কিনেছে জনসংখ্যার ৪৪৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ৪১৮ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ২৬৬ শতাংশ এবং ইইউ ২৪৪ শতাংশ।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকো ৮৪ শতাংশ, ব্রাজিল ৪৬ শতাংশ ও কাজাখস্তান ১৫ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারবে।

সবচেয়ে কম ফিলিপাইন তার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশকে ভ্যাকসিন দিবে পারবে বলে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ৯ ডিসেম্বর সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা বলতে চাই— এটিকে বৈশ্বিক কমনগুড হিসেবে দেখা হোক।… যদি (ভ্যাকসিনের) পেটেন্ট রাইট তুলে দেওয়া হয় তাহলে তা সারা বিশ্বে উৎপাদন করা যাবে।’

তার মতে, ‘ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (ভ্যাকসিন গবেষণায়) যে অর্থ ব্যয় করেছে এর অধিকাংশই সরকারি অর্থ। কিছুটা তাদের নিজেদের।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা তো বলছি না ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হোক। ভ্যাকসিন উন্নয়নে কতো খরচ হয়েছে তা জানানো হোক।… আমরা যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়া যাবে না। তাদের জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান করতে হবে। এখন অন্যদের সঙ্গে জ্ঞান আদান-প্রদান করার সময়, নিয়ন্ত্রণ বা (জীবন নিয়ে) দরকষাকষির সময় নয়।’

পলিও টিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘এর উদ্ভাবক জোনাস সাক বলেছিলেন এটি জনগণের ভ্যাকসিন। কেউ এটা থেকে মুনাফা করুক তিনি তা চাননি। আসলে এটা তো একটা ধারাবাহিকতা।’

তিনি মনে করেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মানবজাতির অস্তিত্ব এমনিতেই হুমকির মধ্যে রয়েছে, এখন অন্যদিক থেকে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন:

বিশ্বের ১৪ শতাংশ ধনীর জন্য ৫৩ শতাংশ ভ্যাকসিন মজুত

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago