যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে মরক্কো-ইসরায়েল

মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সুদান, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ আবার শুরু করবে মরক্কো।

এতে আরও বলা হয়েছে, চুক্তির অংশ হিসেবে বিরোধপূর্ণ পশ্চিম সাহারার ওপর মরক্কোর সার্বভৌমত্বে রাজি হয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গতকাল ট্রাম্প মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর এই সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ চুক্তির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন। বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার নীতি থেকে সরে আসছে আরব রাষ্ট্রগুলো।

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নির্বাহী কমিটির সদস্য বাসাম আস সালহি মরক্কো-ইসরায়েল চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘২০০২ সালের আরব শান্তি প্রচেষ্ঠা থেকে কোনো আরব সরে এলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এটি ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকারকে ইসরায়েলের ক্রমাগত অস্বীকার করে যাওয়ার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’

গাজায় হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম বলেছেন, ‘প্রতিটি নতুন চুক্তির পর দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর আগ্রাসন বাড়িয়ে দেয় এবং ফিলিস্তিনের জমিতে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপন করে।’

এক রাজকীয় বার্তায় বলা হয়েছে, ‘মরক্কোর বাদশাহ গতকাল ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে টেলিফোনে বলেছেন, তার দেশ পৃথক ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মাধ্যমে সংঘাতের অবসান চায়।’

চুক্তিতে যা রয়েছে

চুক্তি মোতাবেক মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে, সরকারি যোগাযোগ পুনস্থাপন করবে, ইসরায়েলকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিবে এবং দেশটির সঙ্গে সরাসরি উড়োজাহাজ যোগাযোগ চালু করবে।

হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক জেরাড কুশনার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তারা রাবাত ও তেল আবিবে লিয়াজোঁ অফিস দ্রুত খুলে দিবে। এরপর দূতাবাস খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইসরায়েল ও মরক্কোর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করবে।’

কুশনার আশা করেছেন, এটা ‘অনিবার্য’ যে সৌদি আরব ইসায়েলকে স্বীকৃতি দিবে।

হোয়াইট হাউসের এক বার্তায় বলা হয়েছে, (ইসরায়েলের সঙ্গে এই চুক্তির বিনিময়ে) বিরোধপূর্ণ পশ্চিম সাহারার ওপর মরক্কোর দাবিকে স্বীকৃতি দিবে যুক্তরাষ্ট্র।

বার্তায় আরও বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সংঘাত মেটাতে স্বাধীন সাহরাবি রাষ্ট্র কোনো বাস্তবসম্মত ভাবনা নয়। মরক্কোর অধীনে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন হতে পারে এর একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান।’

যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে পশ্চিম সাহারার স্বাধীনতার জন্যে লড়াইরত সংগঠন পলিসারিও ফ্রন্ট। এক বার্তায় সংগঠনটি বলেছে, ‘(যুক্তরাষ্ট্রের) এমন ভূমিকা জাতিসংঘের নীতিমালার ঘোর বিরোধী। এটি এই অঞ্চলে সংঘাত দূর করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’

সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস

উত্তর আফ্রিকার আরব দেশ মরক্কোর সঙ্গে ইহুদিদের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। তাই দীর্ঘদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রস্তুত মরক্কো।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই মরক্কোতে বহু ইহুদি বসবাস করতেন। তাদের পূর্ব পুরুষদের অনেকেই নির্যাতিত হয়ে স্পেন ও পর্তুগাল থেকে উত্তর আফ্রিকায় এসেছিলেন। এখনো দেশটিতে কয়েক হাজার ইহুদি বাস করছেন।

মরক্কো অনেক বছর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। নব্বইয়ের দশকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তি সই করার পর থেকে মরক্কো-ইসরায়েল এক ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে। তবে ২০০০ সালে ফিলিস্তিনে দ্বিতীয় গণজাগরণ শুরু হলে সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

এরপর থেকে দেশ দুটি অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখে।

প্রতিবেদন মতে, প্রতি বছর অন্তত ৫০ হাজার ইসরায়েলি মরক্কো ভ্রমণ করেন। তারা সেখানে ইহুদির ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ চুক্তিকে অনেক বিশ্লেষক ইরানের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে বৃহত্তর আরব জোট গড়ার প্রচেষ্ঠার অংশ হিসেবে দেখছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Ishraque announces suspension of protest for 48 hours

He made the announcement while talking to the party men in front of Kakrail mosque this afternoon

10m ago