ভ্যাকসিন বেচে ২০২১ সালে ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করবে মডার্না ও ফাইজার

প্রতীকী ছবি

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারিতে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে ফাইজার ও মর্ডানা। ওয়াল স্ট্রিট বিশ্লেষকরা বলছেন, সংস্থা দুটি কেবল করোনা ভ্যাকসিন বিক্রি করেই ২০২১ সালে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করবে। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন যেমন বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও মানবতার জন্য একটি মাইলফলক, ঠিক তেমনই আগামী কয়েক বছর এটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর প্রধান অর্থোপার্জনের মাধ্যম হয়ে উঠবে। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মরগ্যান স্ট্যানলির মতে, ফাইজার একাই ২০২১ সালে করোনা ভ্যাকসিন থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলার লাভ করতে পারে, যা ২০২০ সালের সংস্থাটির ৯৭৫ মিলিয়ন ডলার আয়কে ছাড়িয়ে যাবে।  

ভ্যাকসিন বিক্রির আয় ভাগাভাগি করে নেবে ফাইজার ও জার্মান সংস্থা বায়োএনটেক।

চলতি মাসের শুরুতে ফাইজারের ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়াও কানাডা, বাহরাইন, সৌদি আরবেও ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার জরুরি চিকিৎসার জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনও (এফডিএ)।

মরগ্যান স্ট্যানলির পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ অব্যাহত থাকলে ২০২২ ও ২০২৩ সালে ফাইজার করোনা ভ্যাকসিন থেকে নয় দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার আয় করবে। গত বছর সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পণ্য হলো নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন, যা থেকে ফাইজার প্রায় পাঁচ দশমিক আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে ফাইজারের প্রত্যাশিত আয় গত বছরের আয়কেও ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, ভ্যাকসিন তৈরির পর ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজারের শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করলেও এখনো তেমনটা ফুলে-ফেঁপে উঠেনি। ফাইজারের শেয়ারগুলো এই বছর কেবল ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে ফাইজারের অংশীদার বায়োএনটেক ইতোমধ্যেই লাভ করতে শুরু করেছে। এর মার্কিন-তালিকাভুক্ত শেয়ারগুলো প্রায় ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। জানা গেছে, জার্মান বায়োটেক সংস্থাটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, গত বছর মডার্নার আয় ছিল মাত্র ৬০ মিলিয়ন ডলার। ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিনের ফলে সংস্থাটি ৬২ বিলিয়ন ডলারের একটি পাওয়ার হাউসে রূপান্তরিত হয়েছে। মডার্না একটি তরুণ বায়োটেক সংস্থা, যার নাম ২০২০ সালের আগে খুব কম লোকই শুনেছে।

সংস্থাটির শেয়ার এই বছর প্রায় ৭০০ শতাংশ বেড়েছে। মরগ্যান স্ট্যানলির অনুমান, সংস্থাটির বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক এখন ভ্যাকসিনের সঙ্গে সংযুক্ত। মডার্নার আকাশছোঁয়া শেয়ারের দাম এটাই বোঝায় যে, বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, করোনা ভ্যাকসিন থেকে সংস্থাটি ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আয় করবে।

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান শ্যাসের মতে, মডার্না কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন থেকে পরবর্তী বছরে ১৩ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার আয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মডার্নার মতো সংস্থা, যা ২০১৯ সালে মাত্র ৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে এবং এর আগে যে সংস্থার কোনো পণ্য এমনকি লাইলেন্সও পায়নি, সেটির জন্য এটি একটি বড় সাফল্য।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভজনক ভূমিকা নিয়ে অনেকেই তীব্র সমালোচনা করছেন। গত মাসে এক বিবৃতিতে ফাইজার জানায়, সংস্থাটির কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উদ্ভব ও উত্পাদন ব্যয় সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন থেকে এসেছে। ঝুঁকির মধ্যেই তারা বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, মহামারি মোকাবিলায় সহায়তা করার প্রয়াসে সংস্থাটি ভ্যাকসিনের বিকাশ ও উত্পাদনের সমস্ত ব্যয় বহন করবে।

অন্যদিকে, ফাইজার ও মর্ডানার প্রতিদ্বন্দ্বী ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা জনসন অ্যান্ড জনসন (জেএনজে) এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা (এজেডএন) মহামারি চলাকালীন অলাভজনক ভিত্তিতে তাদের ভ্যাকসিন বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ভ্যাকসিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। লাখো শ্রমিক যারা করোনার কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করবে।

তাই মহামারি মোকাবিলায় ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাকে সবাই অভিনন্দন ও উত্সাহ জানাতে ব্যস্ত থাকার ফলে তাদের বিপুল অর্থ আয়ের দিকটি কিছুটা আড়ালেই থেকে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

'Frustrated, Yunus hints at quitting'

Frustrated over recent developments, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus is considering stepping down, said sources familiar with what went down at the Chief Adviser’s Office and Jamuna yesterday.

4h ago