ডাকাতির মামলা: বেশিরভাগ অপরাধীর সাজা হয় না

এটি প্রায় ১৫ বছর আগের মানিকগঞ্জের এক চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা।

এটি প্রায় ১৫ বছর আগের মানিকগঞ্জের এক চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা।

২০০৬ সালের ৩০ জুন মধ্যরাতে ঘিওর উপজেলার সিধুনগরের হাবিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালায় মুখোশধারী ডাকাতেরা। সেসময় তিনি ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ দেখছিলেন।

ওই বাড়ি থেকে দুই লাখ ৩১ হাজার টাকা নগদ, স্বর্ণালঙ্কার এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার আগে ডাকাতরা হাবিবুর রহমানকে গুলি করে ঘটনাস্থলেই তাকে হত্যা করে এবং আরও চার জনকে আহত করে।

পরের দিন হাবিবুরের ভাই মোক্তার হোসেন ১৫-১৬ জন অজ্ঞাত ডাকাতকে আসামি করে ঘিওর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

১১ বছর পর মানিকগঞ্জের একটি আদালত মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত সবাইকে খালাস দিয়েছেন।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল মামলার রায় দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। সেসময় আদালতের পর্যবেক্ষণে জানানো হয়, ঢালাও তদন্ত এবং ত্রুটিযুক্ত অভিযোগপত্রের কারণে আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

মামলার ঢালাও তদন্তের ক্ষেত্রে এটিই একমাত্র ঘটনা নয়।

আইন বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মতে, সাক্ষীর অনুপস্থিতি বা পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্যদান, ঢালাও তদন্ত এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির অপ্রকৃত রেকর্ডিংয়ের কারণে বেশিরভাগ অপরাধী শাস্তি পায় না বরং অবাধে চলাফেরা করে।

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম খান জানান, তার ধারণা ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ডাকাতির মামলায় দণ্ডাদেশ দেখা যায় না।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআিই) একটি প্রতিবেদনে অনুরূপ সত্যতা পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায় ২০১৬-১৭ সালে ৭৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ উদ্বেগজনক ডাকাতির মামলা কোনো দোষী সাব্যস্ত ছাড়াই শেষ হয়ে গেছে।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে ঘিওরের ঘটনাটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

বাদী মামলার বিবরণীতে ১৫-১৬ জন আসামির কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা ৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যা আদালতের কাছে অবিশ্বাস্য বলে হয়।

আদালত সেসময় জানান, এতো সংখ্যক ডাকাত পার্শ্ববর্তী কোনো এলাকায় ডাকাতির জন্য যাবে না।

এরপর ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ১৬৪ ধারা অনুযায়ী তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ত্রুটি দেখা দেয়। প্রসিকিউশন প্রমাণ আইনের বিধান অনুযায়ী আদালতে জবানবন্দি পেশ করেনি।

বিচারক মন্তব্য করেন, তিন আসামির কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজেদের জড়িত থাকার কথা বলেননি এবং বিষয়টি অন্য কোনো সাক্ষীর জবানবন্দিতেও সমর্থন করে না। সুতরাং এ ধরনের জবানবন্দির মাধ্যমে কেউ দোষী হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে না।

অভিযোগপত্রে প্রসিকিউশন ১৯ জন সাক্ষীর নাম প্রকাশ করলেও, তারা বিচারের সময় কেবল ১১ জনকে হাজির করতে পেরেছে।

সাক্ষীদের কেউই তাদের জবানবন্দিতে অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করেনি। সন্দেহভাজনদের অন্য কোনো ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত করার কোনো দাবি বা প্রমাণও পাওয়া যায়নি বলে জানান আদালত।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Trial of Robbery Cases: Most offenders go unpunished

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago