ভ্যাকসিনেই স্বাভাবিক হবে না আন্তর্জাতিক ভ্রমণ

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকেই গোটা বিশ্ব ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে আছে। পৃথিবীকে আগের অবস্থায় ফিরে পেতে ভ্যাকসিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, কার্যকর ভ্যাকসিনের অনুমোদন ও বিতরণ শুরুর পরেও, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
International Travel-1.jpg
ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকেই গোটা বিশ্ব ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে আছে। পৃথিবীকে আগের অবস্থায় ফিরে পেতে ভ্যাকসিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, কার্যকর ভ্যাকসিনের অনুমোদন ও বিতরণ শুরুর পরেও, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করলেই নিরাপদ আন্তর্জাতিক ভ্রমণ চালু নিশ্চিত করা যাবে না। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশগুলোকে আরও কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বায়োস্ট্যাটিক্স অ্যান্ড এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান এস্টারম্যান জানান, ফ্লাইটে ওঠার আগে যাত্রীরা যদি ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন, তবে সংক্রমণের ঝুঁকি কমতে পারে। সেক্ষেত্রে ঝুঁকিও থেকে যায়।

ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, তাদের তৈরি এমআরএনএ ভ্যাকসিন করোনা প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। তাদের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ৪৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবীদের অর্ধেকের ওপর এটি প্রয়োগ করেছে, বাকি অর্ধেক স্বেচ্ছাসেবী প্লাসেবো পেয়েছেন। কয়েকজন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হালকা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল। তাই সবমিলিয়ে ভ্যাকসিনটিকে নিরাপদ বলা যায়।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, গবেষণায় ৬৫ বা তার বেশি বয়সীদের এবং অসুস্থ ব্যক্তি- যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন তাদেরকে ফাউজারের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে রাখা হয়েছিল।

অ্যাড্রিয়ান এস্টারম্যান বলেন, ‘ফাইজারের গবেষণাটিতে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর করোনা আক্রান্তদের উপসর্গ দেখা না যাওয়ার তথ্য উঠে আসলেও, করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি নিয়ে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এ ভ্যাকসিন অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। তবে, কেউ যদি করোনায় সংক্রমিত হন এবং তার যদি উপসর্গ না থাকে, তবে তিনি অন্যকে সংক্রমিত করবেন কি না, সেটি জানা জরুরি।’

জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী উগার শাহিনের মতে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিনটি ৫০ শতাংশ সংক্রমণ কমাতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন কতদিন পর্যন্ত ইমিউনিটি দিতে পারে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ২০২১ সালের মধ্যে এটি জানা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, ভ্যাকসিন অনুমোদন পেলেও সবার কাছে সেটি পৌছাতে দীর্ঘসময় লাগতে পারে। যারা ভ্যাকসিন নিতে চায় তাদের প্রত্যেককে ভ্যাকসিন দিতে কয়েক মাস- এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ করা প্রতিটি যাত্রী ভ্যাকসিন দিতে পারবেন, এমনটাও আশা করা যায় না। তাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনের নিয়মও চালু রাখা হতে পারে।

সিএনএন জানায়, কয়েকটি দেশ যাদের মধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন তেমনটা হয়নি। নভেম্বর পর্যন্ত টঙ্গা, কিরিবাতি, মাইক্রোনেশিয়া, পালাউ, সামোয়া ও টুভালুর মতো অনেক প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশে সংক্রমণের হার খুব কম।

এ ছাড়াও, আরও কয়েকটি দেশে কোভিড-১৯ এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কম হয়েছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। যেমন- নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর।

কিছু সংস্থা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে কোভিড ঝুঁকির মাত্রা নিয়ে রেটিং তৈরি করেছে। যেমন: ইউরোপীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (ইসিডিসি) প্রতিটি ইউরোপীয় দেশের কোভিড পরিস্থিতিকে ‘স্থিতিশীল’, ‘উদ্বেগজনক’ ও ‘মারাত্মক উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

দেশগুলোর বিগত ১৪ দিনে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা, অনুপাত ও মৃত্যুর হারসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এই ধরনের রেটিং করা হয়ে থাকে।

অ্যাড্রিয়ান এস্টারম্যান বলেন, ‘স্পষ্টতই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বা দেশের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দেওয়া না হলে অন্য দেশে যাওয়ার পর তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।’

বেশিরভাগ দেশেই এখন প্রবেশের আগে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। ভ্রমণের আগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা টেস্ট করে নেগেটিভ ফল পেলে সেই সার্টিফিকেট দিয়ে তবেই ভ্রমণ করা যায়।

আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) বিমান সংস্থাগুলোকে যাত্রা শুরুর আগে সব যাত্রীকে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

অনেক দেশেই বিমানবন্দর ও সীমান্তে করোনা দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে। যদিও এটি পিসিআর পরীক্ষার মতো নির্ভুল ফল দেয় না, তবে এই পরীক্ষাগুলো একটু হলেও নিশ্চয়তা দেবে যে, কোনো ভ্রমণকারী কোভিড-১৯ নিয়ে অন্য দেশে যাচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনকি ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও বিমানবন্দর ও সীমান্তে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভ্যাকসিন দিলেও কোনো যাত্রী করোনা আক্রান্ত নন বা অন্য কাউকে সংক্রমিত করবেন না, এমন নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।

করোনা ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণ শুরু হলে, বিভিন্ন দেশ ও বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীদের কাছে ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট চাইতে পারে।

কোয়ান্টাস এয়ারওয়েজ লিমিটেডের প্রধান কর্মকর্তা অ্যালান জয়েস জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোভিড ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।

এদিকে, ভ্রমণকারীদের শারীরিক অবস্থা জানতে বিশ্বজুড়ে অনেক গ্রুপ ইমিউনিটি পাসপোর্ট ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।

আশা করা হচ্ছে, ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হওয়ার পর আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মহামারির আগের অবস্থায় ফিরতে এখনো অনেক সময় লাগবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago