নাঈমের বিস্ফোরক সেঞ্চুরির পরও হারল ঢাকা, শেষ চারে তামিমরা

বিস্ফোরক সেঞ্চুরি করলেন ওপেনার নাঈম শেখ। তবুও বেক্সিমকো ঢাকাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারলেন না তিনি।
naim
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সাইফ হাসানের পর আফিফ হোসেন ও তৌহিদ হৃদয় আগ্রাসী ফিফটিতে দুইশো ছোঁয়া স্কোর গড়ল ফরচুন বরিশাল। পরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে প্রথমবার খেলতে নামা সোহরাওয়ার্দি শুভ বোলিংয়ে দেখালেন জাদু। তাকে ছাপিয়ে বিস্ফোরক সেঞ্চুরি করলেন ওপেনার নাঈম শেখ। তবুও বেক্সিমকো ঢাকাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারলেন না তিনি। দারুণ জয়ে আসরের শেষ চারে নাম লেখাল তামিম ইকবালের দল।

শনিবার প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বের শেষ দিনে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ২ রানের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে বরিশাল। ১৯৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় ঢাকা থামে ৬ উইকেটে ১৯১ রানে।

মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীকে ছিটকে দিয়ে ৮ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বরিশাল পেয়েছে প্লে-অফের টিকিট। হেরে যাওয়ায় সমান ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়ে প্রাথমিক পর্ব শেষ করেছে মুশফিকুর রহিমের ঢাকা।

এই দুটি দলই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের এলিমিনেটর ম্যাচে আগামী সোমবার মুখোমুখি হবে। একই দিনে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ও দ্বিতীয় দল জেমকন খুলনা প্রথম কোয়ালিয়াফায়ারে পরস্পরকে মোকাবিলা করবে।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৩ রান তোলে বরিশাল। পাওয়ার প্লে দারুণভাবে কাজে লাগান সাইফ। তামিম খেলতে থাকেন দেখেশুনে। প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি আদায় করে নেয় এই জুটি। অফ স্পিনার রবিউল ইসলাম রবির করা ষষ্ঠ ওভারে ৩টি চার মেরে দলের সংগ্রহ পঞ্চাশে নিয়ে যান সাইফ।

saif hassan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে ৫৯ রানের জুটি ভাঙেন আল-আমিন জুনিয়র। তাকে উড়িয়ে মারতে লং অফে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দেন তামিম। তার ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ১৯ রান।

থিতু হয়ে বিদায় নেন পারভেজ হোসেন ইমন। নিজের প্রথম ওভারেই তাকে ফেরান পেসার মুক্তার আলী। আসরে প্রথম ফিফটি তুলে নেওয়ার পর সাজঘরের পথ ধরেন সাইফ। অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলার রুবেল হোসেনের দ্বিতীয় স্পেলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। ৪৩ বলে ৫০ রানের ইনিংসে ৮টি চার মারেন সাইফ।

৪৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানো বরিশালকে আরও চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল ঢাকা। কিন্তু পেসার শফিকুল ইসলামের ডেলিভারিতে থার্ড ম্যানে আফিফ হোসেনের সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি বল হাতে খরুচে রবি। উল্টো হয়ে যায় ছক্কা।

জীবন পেয়ে তেড়েফুঁড়ে ব্যাট করতে থাকেন আফিফ। স্লগ করে মুক্তারকে ছয় মেরে সীমানাছাড়া করেন তিনি। এরপর হাত খোলেন হৃদয়। শফিকুলকে মিড উইকেট দিয়ে ছয় মারার পর মুক্তারের বল মাঠের বাইরে পাঠান এক্সট্রা কভার দিয়ে। পরে তারা হয়ে ওঠেন লাগামছাড়া।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে মাঝের আট ওভারে রানের গতি ঝুলে গিয়েছিল বরিশালের। সেসময়ে আসে মাত্র ৫৪ রান। শেষ ছয় ওভারে পাল্টে যায় গোটা চিত্র। আফিফ-হৃদয়ের তাণ্ডবে ৮৯ রান তোলে দলটি। মুক্তার-শফিকুলের শেষ দুই ওভারেই আসে ৪০ রান।

afif and towhid
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চতুর্থ উইকেটে ৩৮ বলে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ার পথে আফিফ আর হৃদয় তুলে নেন ফিফটি। আফিফ ২৫ বলে করেন অপরাজিত ৫০ রান। তার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ৫টি ছয়। হৃদয় মারেন ২টি চার ও ৪টি ছক্কা। তিনি অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ৫১ রানে। ইনিংসের শেষ বলে চার মেরে আসরে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির নজির গড়েন তিনি।

লক্ষ্য তাড়ায় ভালো সূচনা পায় ঢাকাও। পাওয়ার প্লেতে বরিশাল তুলেছিল ৫০ রান, তারা তোলে ৫২ রান। নাঈম আর সাব্বিরের ব্যাটে এগোতে থাকে রানের চাকা।

ব্যাটিং করার পর ঢাকার অধিনায়ক তামিম আর মাঠে নামেননি। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব সামলান মেহেদী হাসান মিরাজ। নাঈমের কাছ থেকে ইনিংসের চতুর্থ ওভারটি মেডেনও আদায় করে নেন তিনি।

ভিত তৈরি হয়ে যাওয়ার পর ১০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় ঢাকা। সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই সাব্বিরকে বিদায় করেন শুভ। তিনি করেন ১১ বলে ১৯ রান। এরপর নবম ওভারে তিন বলের মধ্যে তিনি শিকার করেন মুশফিক ও আল-আমিনকে।

মুশফিক ৭ বলে ৫ রান করে হন এলবিডব্লিউ। আল-আমিন খুলতে পারেননি রানের খাতা। উইকেটের পেছনে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের তালুবন্দি হন তিনি।

ভীষণ চাপে পড়া ঢাকাকে লড়াইয়ে ফেরায় নাঈম ও ইয়াসির আলীর জুটি। পাল্টা  ৫৯ বলে তারা যোগ করেন ১১০ রান। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে ব্যক্তিগত ৪৯ রানে জীবন পান নাঈম। সহজ ক্যাচ ফেলে দেন পারভেজ। ৪৩ রানে ফিফটি পূরণ করা নাঈম এরপর ছোটেন আলোর গতিতে। পরের পঞ্চাশ রান তিনি আদায় করেন মাত্র ১৭ বলে। রাব্বির এক ওভারেই তিনি হাঁকান ৩ ছক্কা।

Sohrawordi Shuvo
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

৬০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন নাঈম। তাসকিন আহমেদের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে চার মেরে তিনি পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। চলতি আসরে এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি।

বিধ্বংসী নাঈমকে সাজঘরে পাঠান সুমন খান। তার আগে ৬৪ বলে ১০৫ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা। তার বিদায়ের পর ১০ বলে ২২ রানের সমীকরণ আর মেলানো হয়নি ঢাকার। কামরুলের করা শেষ ওভারে দলটির প্রয়োজন ছিল ১৭ রান।

কিন্তু ইয়াসির ২৮ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ রান করে প্রথম বলেই হন রানআউট। এরপর মুক্তার ওভারের দ্বিতীয় ও আকবর আলী শেষ বলে ছয় হাঁকালেও জয়ের বন্দর থেকে সামান্য দূরে নোঙর ফেলতে হয় ঢাকাকে। ওই ওভারে আসে ১৪ রান। পতন হয় ২ উইকেটের। বরিশালের সবচেয়ে সফল বোলার শুভ তিন ওভারে ১৩ রানে নেন ৩ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৯৩/৩ (সাইফ ৫০, তামিম ১৯, পারভেজ ১৩, আফিফ ৫০*, তৌহিদ ৫১*; রুবেল ১/২৮, রবি ০/৪০, নাসুম ০/১৪, শফিকুল ০/৫১, আল-আমিন ১/৫, মুক্তার ১/৪৮)

বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১৯১/৬ (নাঈম শেখ ১০৫, সাব্বির ১৯, মুশফিক ৫, আল-আমিন ০, ইয়াসির ৪১, আকবর ৯*, মুক্তার ৬, রবি ০*; তাসকিন ০/৪৮, মিরাজ ০/৩৩, সুমন ১/৪৪, শুভ ৩/১৩, আফিফ ০/১২, কামরুল ১/৪১)

ফল: বরিশাল ২ রানে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago