আজকের দিনে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: স্টার

আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জ জেলা পাকিস্তান হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের ফলে মানিকঞ্জের মাটি ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোষররা।

দীর্ঘ নয় মাসের এই মুক্তি সংগ্রামে মানিকগঞ্জে ছোট-বড় ৪২টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে শহীদ হন ৫৪ এবং আহত হন ১৭ মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও, হত্যা করা হয় সাড়ে সাত হাজার নিরীহ মানুষকে।

বিভিন্ন থানা থেকে আগেই সরে এসে মহকুমা শহরে অবস্থান নিয়েছিল পাকিস্তান হানাদাররা। মানিকগঞ্জ সিএন্ডবি’র ডাকবাংলো ছিল তাদের সদরদপ্তর। সেখান থেকেই হানাদার ও তাদের দোসররা নিধনযজ্ঞ চালাত। তাদের মূল ব্যারাক ছিল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পিটিআইয়ের মূল ভবনে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মানিকগঞ্জে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাজহারুল হক চান মিয়াকে চেয়ারম্যান করে ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল হালিম চৌধুরী, মো. মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী, মীর আবুল খায়ের ঘটু ও মফিজুল ইসলাম খান কামালসহ সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

বিপ্লবী কমান্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ মার্চ রাতেই মানিকগঞ্জ ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়। এর একদিন পর, ২৬ মার্চ ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর আলুর গুদামের পিছনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হলে এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হেলিকপ্টারে মানিকগঞ্জ শহরের বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা প্রবেশ করে।

প্রথমে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করার চিন্তা করলেও কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা জেলার হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে আশ্রয় নেন এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করেন। অপরদিকে, ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরেই পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ জুলাই ঘিওর থানা আক্রমণ করেন। সে সময় অস্ত্র ও গোলাবারুদ তাদের হস্তগত হয়।

মানিকগঞ্জে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে খ্যাত গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর এক কর্নেলসহ ৮১ নিহত হয়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর  মানিকগঞ্জ জেলা হানাদার মুক্ত হয়।

২২ নভেম্বর ঘিওরের তেরশ্রী গ্রামে হামলা করে ৪২ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। মানিকগঞ্জে বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পঙ্গু হন নয় মুক্তিসেনা। বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে চার জনকে খেতাব দেওয়া হয়।

খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন স্কোয়াড্রন লিডার (অব) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক) ও মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)।

বিজয়ের এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মানিকগঞ্জে প্রতি বছর উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপন করা হয় ১৫ দিন ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। জেলার মুক্তিযুদ্ধারা ১৯৯১ সাল থেকে এ মেলা পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু, এবার করোনা মহামারির কারণে মেলা বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাটুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করি।’

এ উপলক্ষে প্রতিবছর বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হলেও করোনার কারণে এবার তা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে পালিত হবে হানাদার মুক্ত দিবস।’

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago