প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও এগিয়ে যাওয়া
কর্মসংস্থান ও সমাজ-অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় দুই ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ব্যক্তিত্ব ও দুই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে দ্য ডেইলি স্টার-ডিএইচএল বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডসের ১৯তম আসরে তাদেরকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে ‘আউটস্ট্যান্ডিং ওমেন ইন বিজনেস’ সম্মাননা এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদিরকে দেওয়া হয়েছে ‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা।
এছাড়াও, ‘বেস্ট ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক ও ‘এন্টারপ্রাইজ অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে তৈরি-পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্স গ্রুপ।
গতকাল সন্ধ্যায় এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ী ব্যক্তিত্ব ও বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনলাইনে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী।
এছাড়াও, যুক্ত ছিলেন নেপালের প্রথম বিলিয়নার ও সিজি কর্প গ্লোবালের চেয়ারম্যান বিনোদ চৌধুরী ও ডিএইচএল এক্সপেস ইমার্জিং মার্কেটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর হায়াত আব্দুল্লাহসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা।
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও দ্য ডেইলি স্টারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, ‘উদ্যোক্তারা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।’
‘এটা সম্ভব হয়েছে আপনাদের নিষ্ঠা ও আমাদের কঠোর পরিশ্রমী জনগণের কল্যাণে,’ যোগ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়াতে ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নেপালের প্রখ্যাত শিল্পপতি বিনোদ চৌধুরী। তিনি প্রয়াত লুতিফুর রহমানকে একজন মহান উদ্যোক্তা ও দূরদর্শী মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্যে তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্যে তিনি সরকারেরও প্রশংসা করেন।
তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের উদ্ভাবন ও সাহস, হার না মানার মানসিকতা ও সর্বপরি সর্বোচ্চ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ায় এই সাফল্য এসেছে।’
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে বাধা হিসেবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘যদি দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসা করতে পারেন তাহলে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে ব্যবসা করতে পারবেন।’
করোনা মহামারির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই তা চালিয়ে যেতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বলেছেন, ‘এটি নতুন সুযোগও সৃষ্টি করবে।’
অনুষ্ঠানে বিনোদ চৌধুরীর লেখা মেকিং ইট বিগ বইটি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
‘আউটস্ট্যান্ডিং ওমেন ইন বিজনেস’ বিজয়ী রূপালী চৌধুরী বলেছেন, ‘এই পুরস্কার আমাকে আরও এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। বাংলাদেশিদের মধ্যে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহ দিবে।’
‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার সম্মাননা’ বিজয়ী আব্দুল মুক্তাদির তার এই সম্মাননার জন্যে পরিবার, ইমপ্রেস গ্রুপের মালিক ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান।
এছাড়াও, উচ্চমানের বিজ্ঞানশিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘শুধু এর মাধ্যমেই আমরা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারব।’
‘বেস্ট ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া ডাচ্–বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেছেন, ‘সেবাগ্রহীতাদেরকে বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চলে থাকেন তাদের কাছে আরও ডিজিটাল প্রডাক্ট নিয়ে উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে এই পুরস্কার অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
‘এন্টারপ্রাইজ অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ বলেছেন, ‘এটি খুবই সম্মানজনক পুরস্কার। এর আগে যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন তারা সবাই সফল ও স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান।’
‘আমরা এই পুরস্কার পেয়ে সম্মানিত। এই পুরস্কার আমাদের সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার প্রচেষ্টা ধরে রাখতে সাহায্য করবে,’ যোগ করেন তিনি।
দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের গল্প সৃজনশীলতা, সাহস ও অধ্যবসায়ের গল্প। তাদের গল্প তুলে ধরে আমরা দেশের মানুষকে অনুপ্রানিত করতে চাই। এর মাধ্যমে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা দূর করতে সহায়তা করতে পারি। এবং যারা উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে নতুন কিছু করেছেন তাদের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দিতে পারি।’
ব্যবসায়ী নেতারা সমাজে যে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করেন সে অনুযায়ী তারা প্রশংসা পান না বলেও মন্তব্য করেছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক।
বলেছেন, ‘যারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন পথ উন্মোচনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন তাদেরকে সবার সামনে তুলে ধরাই এই পুরস্কারের উদ্দেশ্য।’
দেশের কৃষিক্ষেত্রে অভাবিত সাফল্যের জন্যে কৃষকদের ও ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণের জন্যে সরকারকে ধন্যবাদ জানান মাহফুজ আনাম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক, বিএএসআইএসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, এইচঅ্যান্ডএমের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক অবদান রাখার জন্যে ব্যবসায়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার অংশ হিসেবে ডিএইচএল এক্সপ্রেস ও দ্য ডেইলি স্টার ২০০০ সালে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস প্রবর্তন করে।
Comments