বয়ান শুনেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার সিদ্ধান্ত, আদালতে ২ মাদ্রাসাছাত্রের জবানবন্দি

ভাস্কর্য নিয়ে বয়ান শুনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে জানিয়েছে এই মামলায় গ্রেপ্তার দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আবু বকর মিঠুন ও সবুজ ইসলাম নাহিদ। আজ আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেছে তারা।
Kushtia.jpg
আবু বকর মিঠুন ও সবুজ ইসলাম নাহিদ। ছবি: সংগৃহীত

ভাস্কর্য নিয়ে বয়ান শুনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে জানিয়েছে এই মামলায় গ্রেপ্তার দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আবু বকর মিঠুন ও সবুজ ইসলাম নাহিদ। আজ আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেছে তারা।

আজ বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

আদালতে তিন ঘণ্টার জবানবন্দিতে সবুজ ইসলাম নাহিদ জানায়, ওয়াজ শুনতে তার ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে ফয়জুল করিম ও মামুনুল হকের ওয়াজ। কিছুদিন হলো ভাস্কর্য নিয়ে তাদের দেওয়া বয়ান শুনে আসছিল তারা।

তারা জানায়, গত ৩ ডিসেম্বর মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ আলী ও সহপাঠী আবু বক্করের সঙ্গে শীতের পোশাক কিনতে কুষ্টিয়া শহরে আসে তারা। মাদ্রাসায় ফেরার পথে পাঁচ রাস্তার মোড় হয়ে ফেরে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দেখে। পরদিন শুক্রবার মাদ্রাসায় মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পর্কে বয়ান শুনেছিল তারা। সেখানে ইমাম ছিলেন ইবনি মাসউদ মাদ্রাসার নাজিমে তালিমা (দ্বিতীয় শিক্ষক) মাওলানা এবাদুর রহমান। তিনি মূর্তি/ভাস্কর্যের ইতিহাস এবং এগুলো ইসলামে অবৈধ বলে বয়ান দেন। বয়ানে ওই শিক্ষক বলেন, কুষ্টিয়ায় পাঁচ রাস্তার মোড়ে শাপলার পরিবর্তে মূর্তি বসানো হয়েছে।

‘নামাজ থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে আমি আর আবু বক্কর পাঁচ রাস্তার মোড়ের মূর্তিটি ভেঙে ফেলবো বলে আলোচনা করি এবং মাদ্রাসার নির্মাণাধীন মসজিদ থেকে দুটি হাতুড়ি নিয়ে দুজন রাতে ভাঙতে বের হই। হেঁটে এসে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলি,’ আদালতে বলেন সবুজ ইসলাম নাহিদ।

স্বীকারোক্তিতে অপর শিক্ষার্থী মো. আবু বক্কর ওরফে মিঠুনও একই কথা বলেছে। তারা জানায়, সকালে মাদ্রাসার শিক্ষকরা (আল-আমিন ও ইউসুফ আলী) তাদের পালিয়ে বাড়িতে যেতে বলে।

গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুই শিক্ষক আল-আমিন ও ইউসুফ আলী আগের দিন শনিবার একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। চার দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষ হওয়ায় বিচারক তাদের শনিবার সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠান।

কুষ্টিয়া শহরতলীর জুগিয়া মাদার শাহ পশ্চিম পাড়ার মাদ্রাসা ইবনি মাসউদের হেফজ বিভাগের দুই ছাত্র মো. আবু বক্কর ওরফে মিঠুন এবং মো. সবুজ ইসলাম নাহিদকে আজ দুপুর সোয়া ২টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে আনা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর রাত ২টার পরে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ৭ ডিসেম্বর ইবনি মাসউদ মাদ্রাসার হেফজ শাখার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৮ তারিখে পুলিশের আবেদনে চার আসামির মধ্যে দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর পাঁচ দিন করে ও দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে চার দিনের রিমান্ড দেন আদালত।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তারা পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় বিষয়টি স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে দুজন জানায় তারা মওলানা মামুনুল হক ও মওলানা ফয়জুল হকের ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ করেছে।

আজ সন্ধ্যায় এক প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মওলানা মামুনুল হক ও মওলানা ফয়জুল হককে এই মামলায় আসামি করা হবে কিনা সেটা আরও তদন্তের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Professor Muhammad Yunus for a road map to the reforms and the next general election.

1h ago