যশোরে যত্নহীন অর্ধশতাধিক বধ্যভূমি
যশোরে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ, গণকবরগুলো সংরক্ষণের অভাবে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। অযত্ন-অবহেলায় বেহাল দশা হয়েছে বেশ কিছু বধ্যভূমির।
মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের স্মৃতি জড়িত অন্তত অর্ধশতাধিক বধ্যভূমি রয়েছে যশোরে। তবে কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ‘পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের বর্বরতার’ এই স্মৃতিচিহ্নগুলো।
প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে বধ্যভূমির জায়গা। সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়ায় কোথাও কোথাও বধ্যভূমির জায়গা দখল করে বাড়ি-ঘর তৈরিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবিলম্বে শহীদদের গণকবরগুলো সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
যশোর জেলা শহর ও শহরতলীতে ৫০টির মতো বধ্যভূমি রয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলায় রয়েছে আরও অসংখ্য বধ্যভূমি। এর মধ্যে ২০টির মতো বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- যশোরের সরকারি মুরগি ফার্ম বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ, শহরতলীর চাঁচড়া বধ্যভূমি, রেলস্টেশন মাদ্রাসার শহীদদের গণকবর, ফার্টিলাইজার ফার্ম গণকবর, ক্যান্টনমেন্ট রোডের ক্লাবে রক্তঋণ সমাধি, শহীদ স্মৃতিফলক, শহীদ লেফটেন্যান্ট আনোয়ার হোসেনের চার সহযোদ্ধার স্মৃতিফলক, বারিনগর শহীদ লেফটেন্যান্ট আনোয়ারের সমাধি, খাজুরা এমএন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলক, বাহাদুরপুর গ্রামের শহীদদের স্মৃতিফলক, বকচর শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ ও খুলনা বাসস্ট্যান্ড বিজয়স্তম্ভ।
এ ছাড়াও, ধোপাখোলায় রয়েছে ২৩ জন শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ, নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে চারুবালা করের সমাধি, ফাতিমা হাসপাতালে শহীদ স্বপন বিশ্বাস ও তার সহযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ, কোতোয়ালি থানায় সদর হাসপাতাল চত্বরে শহীদের কবর।
এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তদারকির অভাবে বর্তমানে বেহাল অবস্থায় আছে। যশোর-খুলনা মহাসড়কের উত্তর পাশে রূপদিয়া নীলকুঠি বধ্যভূমির বেশিরভাগ জায়গা দখল হয়ে গেছে।
পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশের দোসররা বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবীসহ নিরীহ শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করেছে এসব বধ্যভূমিতে। শহরের অন্যতম বধ্যভূমি শংকরপুর রায়পাড়া এলাকায় হত্যা করা হয়েছিল অসংখ্য মানুষকে। যশোর জেনারেল হাসপাতাল, বকচর, কোতোয়ালি থানা ও রেলস্টেশন মাদ্রাসা সংরক্ষিত এলাকায় হওয়ায় এখানকার বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।
প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে বছরের অন্য দিনগুলোতে এই বধ্যভূমিগুলো থাকে অযত্ন আর অবহেলায়।
Comments