লিটন-মিঠুনের ব্যাটে ছোট পুঁজি মাড়িয়ে ফাইনালে চট্টগ্রাম

প্রথম সুযোগ হাতছাড়া করলেও দ্বিতীয় সুযোগ কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে উঠল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।
liton das
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ম্যাচসেরা মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাহিদুল ইসলামরা দারুণ বোলিংয়ে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন আগেই। তাদের দেখানো পথে হেঁটে বেক্সিমকো ঢাকার ছোট পুঁজি তাড়ার কাজটা অনায়াসে সারলেন লিটন দাস-মোহাম্মদ মিঠুনরা। প্রথম সুযোগ হাতছাড়া করলেও দ্বিতীয় সুযোগ কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে উঠল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।

মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ঢাকাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম। সাবধানী ব্যাটিংয়ে ১১৭ রান তাড়া করে দলটি জিতেছে ৫ বল হাতে রেখে। ওপেনার লিটন সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন ৪৯ বলে। অধিনায়ক মিঠুনের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ৩৪ রান। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার করেন ২৩ বলে ২৭ রান।

আগামী শুক্রবার বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে একই ভেন্যুতে আসরের ফাইনালে জেমকন খুলনার মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম। প্রাথমিক পর্ব পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে শেষ করেছিল তারা। এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে তারা আগের দিন খুলনার কাছে হেরেছিল ৪৭ রানের বড় ব্যবধানে। তবে দ্বিতীয় সুযোগ তারা হাতছাড়া করেনি।

সহজ লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে কোনো বিপদ ঘটতে দেননি লিটন ও সৌম্য। সেসময়ে আসে ৪২ রান। পরের ওভারে আকবর আলীর সরাসরি থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। তাতে ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে ঢাকাকে লড়াই থেকে ছিটকে দেন লিটন ও মিঠুন। চার-ছয় মারার চেয়ে স্ট্রাইক বদলে রানের গতি সচল রাখাতে নজর ছিল তাদের। চট্টগ্রামের সংগ্রহ একশো পেরিয়ে যাওয়ার পর ৭ রানের ব্যবধানে আউট হন দুজনই। ততক্ষণে জয় অবশ্য নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। বাকি দায়িত্বটুকু পালন করেন শামসুর রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১৬ রানে গুটিয়ে যায় ঢাকা। মোস্তাফিজ ৩২ রানে নেন ৩ উইকেট। আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুলের শিকার ১৭ রানে ২ উইকেট। ১ উইকেট নিতে স্পিনার নাহিদুলের খরচা মাত্র ১৫ রান।

chattogram.jpg
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ইনিংসের শুরুতে চমক উপহার দেয় ঢাকা। নিয়মিত লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করা মুক্তার আলীকে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয় সাব্বির রহমানের সঙ্গে। কিন্তু এই বাজি কাজে লাগেনি। ৩ বলের ব্যবধানে বিদায় নেন দুজন।

রাকিবুল হাসানের এক ওভারে ২টি চার মারা সাব্বির পুল করতে গিয়ে মাঝবৃত্তের ভেতরে ক্যাচ দেন সৈকত আলীকে। ১১ বলে ১১ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের হন্তারক শরিফুল। পরের ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম ডেলিভারিতেই মুক্তারকে বিদায় করেন নাহিদুল। টাইমিংয়ে গড়বড় করে কভারে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ধরা পড়েন তিনি।

১৯ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ঢাকা পাওয়ার প্লেতে স্বাভাবিকভাবেই সুবিধা করতে পারেনি। তারা তোলে মাত্র ৩৩ রান। এসময়ে আসে মোটে ৪টি বাউন্ডারি।

পজিশন বদলে তিনে নামা নাঈম শেখ ও অধিনায়ক মুশফিক এরপর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু ডট বলে বাড়তে থাকে চাপও। তা সরানোর প্রচেষ্টায় রাকিবুলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন নাঈম। ৩২ বলে ৩১ রানের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটিতে তার অবদান ১৭ বলে ১২ রান।

এরপর আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ থাকে নয় মিনিট (স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটসহ)। ফ্লাড লাইটের বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি হয় এমন পরিস্থিতি।

আগের দিন ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর ঢাকার হাল ধরেছিলেন মুশফিক ও ইয়াসির আলী। এদিন আভাস ছিল। প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু সম্ভাবনার কুঁড়ি ফুল হয়ে ফোটেনি।

সঙ্গীকে স্ট্রাইক দিতে ভুগতে থাকা মুশফিক স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন রাকিবুলের হাতে। মোসাদ্দেকের ডেলিভারিতে সীমানা থেকে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন রাকিবুল। ৩১ বলের শ্লথ ইনিংসে মুশফিকের সংগ্রহ ২৫ রান। তাতে বাউন্ডারি ২টি।

mustafiz
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ঢাকার পঞ্চম উইকেটের পতন হয় দলীয় ৯৪ রানে। ১৮তম ওভারে। মোস্তাফিজকে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি হন ইয়াসির। ১টি করে চার ও ছয়ে ২১ বলে তিনি করেন ২৪ রান।

ওই ওভারে চার মেরে দলের সংগ্রহ তিন অঙ্কে নিয়ে যান আল-আমিন। এরপর আকবরও ফেরেন দ্রুত। শরিফুলের বলে তিনিও উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন।

ইনিংসের ১৯তম ও নিজের শেষ ওভারে টানা ২ উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান মোস্তাফিজ। আল-আমিনের ব্যাটে ছক্কা খাওয়ার পরের বলে তাকে বোল্ড করে দেন তিনি। ওভারের তৃতীয় বলে নাসুম আহমেদের স্টাম্প উপড়ে ফেলার পাশাপাশি ভেঙেও ফেলেন দ্য ফিজ খ্যাত তারকা। 

ঢাকার হয়ে একমাত্র মারমুখী ব্যাটিং করা আল-আমিন করেন ১৮ বলে ২৫ রান। নাসুম পান গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। শেষ ওভারে দলটির ইনিংস মুড়িয়ে দেন সৌম্য। শেষ ৫ উইকেট ঢাকা হারায় তার মাত্র ১২ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১১৬ (সাব্বির ১১, মুক্তার ৭, নাঈম ১২, মুশফিক ২৫, ইয়াসির ২৪, আল-আমিন ২৫, আকবর ২, রবিউল ৩*, নাসুম ০, রুবেল ২, শফিকুল ০; শরিফুল ২/১৭, রাকিবুল ১/২৬, নাহিদুল ১/১৫, মোস্তাফিজ ৩/৩২, মোসাদ্দেক ১/২২, সৌম্য ১/৩)

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ১৯.১ ওভারে ১১৭/৩ (লিটন ৪০, সৌম্য ২৭, মিঠুন ৩৪, শামসুর ৯*, মোসাদ্দেক ২*; রুবেল ০/১৯, রবিউল ০/২৮, শফিকুল ০/১৯, নাসুম ০/১৭, মুক্তার ১/২৮, আল-আমিন ১/৪)

ফল: গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

13h ago