আইসিইউ চাহিদা বাড়ছে

নভেম্বর থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় দুই গুণ বেড়েছে। চট্টগ্রামেও আইসিইউতে চিকিৎসা দরকার এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
অনেকেই মাস্ক সঙ্গে রাখেন করোনা নয়, জরিমানা থেকে বাঁচার জন্যে। ছবি: প্রবীর দাশ

নভেম্বর থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় দুই গুণ বেড়েছে। চট্টগ্রামেও আইসিইউতে চিকিৎসা দরকার এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, সংকটপূর্ণ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণেই সংকটপূর্ণ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, ১০ ডিসেম্বর থেকে গত এক সপ্তাহে ঢাকা শহরের ১৯টি কোভিড-১৯ হাসপাতাল বা হাসপাতালের ইউনিটে প্রতিদিন গড়ে ৬২টি আইসিইউ শয্যা খালি ছিল। গত মাসের একই সময়ে (১০-১৬ নভেম্বর) প্রতিদিন গড়ে খালি ছিল ১১৯টি আইসিইউ শয্যা।

ঢাকার কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে মোট ২৮৮টি আইসিইউ শয্যা আছে। এর মধ্যে ১১৩টি শয্যা রয়েছে ১০টি সরকারি হাসপাতালে এবং বাকি ১৭৫টি রয়েছে নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে।

গত ৩ থেকে ৯ ডিসেম্বর, এই সাত দিনে প্রতিদিন গড়ে ফাঁকা ছিল ৮২টি আইসিইউ শয্যা।

এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় যে, সংকটপূর্ণ রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যার চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

চট্টগ্রামে সংকটপূর্ণ রোগীর সংখ্যা বাড়ার হার ঢাকার তুলনায় কিছুটা কম। সেখানে সাতটি কোভিড-১৯ হাসপাতালে মোট ৪৫টি আইসিইউ শয্যা আছে।

গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ২২টি আইসিইউ শয্যা খালি ছিল। আর গত মাসের একই সময়ে প্রতিদিন গড়ে খালি ছিল ২৭টি।

দেশের প্রথম কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগরে সহকারী অধ্যাপক ডা. এমএ হাসনাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগে (দুই মাস আগে) করোনা রোগীর সংখ্যা কমেছিল। এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে, এটি বাড়ছে। আইসিইউ প্রয়োজন, এমন সংকটপূর্ণ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’

‘দেশের করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই যে পরিমাণ সংকটপূর্ণ রোগী আমরা পেয়েছিলাম, এখন তার চেয়েও বেশি পাচ্ছি। গুরুতর অসুস্থ না হলে তো কোভিড-১৯ রোগীরা সাধারণত হাসপাতালে আসে না’, বলেন তিনি।

নতুন মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে করোনায় আরও ২৭ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন সাত হাজার ১৫৬ জন। মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত আরও এক হাজার ৬৩২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৯৫ হাজার ৮৪১ জনে।

ওই ২৪ ঘণ্টায় অ্যান্টিজেন ও আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে ১৭ হাজার ২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার হয়েছে নয় দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।

মহামারি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা পরিমাপের প্যারামিটারগুলোর মধ্যে শনাক্তের হার প্যারামিটারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের বেশি হলে বোঝায় যে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নেই।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর শনাক্তের হার তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু, মে’র শেষের দিকে এটি বেড়ে ২৫ শতাংশে দাঁড়ায়। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি ছিল। পরবর্তীতে অক্টোবরে এসে শনাক্তের হার ১০ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।

নভেম্বরের শুরুতে দৈনিক শনাক্তের হার আবার বাড়তে শুরু করে এবং এরপর গত দুই মাসে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক এবং রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাধারণত সংক্রমণ বাড়ার তিন সপ্তাহ পরে হাসপাতালে নেওয়ার মতো সংকটপূর্ণ রোগীর সংখ্যা বাড়ে। যেহেতু সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, তাই আমরা দেখছি যে, হাসপাতালগুলোতেও চাপ বাড়ছে।’

নিরাপদ থাকার জন্য জনগণের প্রতি মাস্ক পরার ও স্বাস্থ্য মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন ডা. মুশতাক হোসেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ওই ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও দুই হাজার ৬২২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা চার লাখ ২৩ হাজার ৮৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ০৯ শতাংশ।

মৃত্যুবরণ করা ২৭ জনের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও চার জন নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৩১-৪০ বছর বয়সী, দুই জনের বয়স ৪১-৫০ বছর বয়সী, ছয় জনের বয়স ৫১-৬০ বছর বয়সী এবং ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ১৮ জন।

Comments