‘শাপলা চত্বর অবরোধের সম্পূর্ণ দায় বাবুনগরীর’
২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে সংগঠিত পুরো ঘটনার দায়ভার হেফাজতে ইসলামের সে সময়ের মহাসচিব ও বর্তমান আমীর জুনাইদ বাবুনগরীর ওপর দিয়েছেন সংগঠনটির সদ্য সাবেক নেতাদের একটি অংশ।
গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর জীবনকর্ম, অবদান শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলা হয়েছে। সভায় অংশগ্রহণকারী নেতারা সবাই শফির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অনুষ্ঠানে হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সলিমুল্লাহ বলেন, তৎকালীন আমীর শাহ আহমদ শফীকে না জানিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদের রাতভর শাপলা চত্বরে রেখে দেন বাবুনগরী। তার ধারণা ছিল, সারারাত শাপলা চত্বরে অবস্থান নিতে পারলে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তাতে সেনাবাহিনী নামতে বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘৫ মে শাপলা চত্বরে যা ঘটেছিল তার পুরো দায়ভার জুনাইদ বাবুনগরীকে নিতে হবে। অনেকেই বলেছিলেন মিটিং সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার জন্য। আল্লামা আহমদ শফী হুজুরও চেয়েছিলেন কর্মসূচি শেষ করতে। কিন্তু বাবুনগরী সারারাত অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন। তিনি হুজুরকে জানান, সারাদেশ থেকে মাদরাসার ছেলেরা শাপলা চত্বরের উদ্দেশে আসছে। সারারাত থাকতে পারলে সেনাবাহিনী নামবে। এরপর তিনি হুজুরকে না জানিয়েই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। হুজুর মুখ ফুটে একটি কথাও বলেননি। বাবুনগরীর ব্যক্তিগত ইচ্ছায় শাপলা চত্বরের অবস্থান দীর্ঘায়িত হয়েছে।’
‘শাপলা চত্বরে যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য ফান্ড কালেকশনের কথা ছিল। বাবুনগরীর খামখেয়ালিরর কারনে সেটিও করা যায়নি,’ অভিযোগ করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজত ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের মহাসচিব মো. ফয়জুল্লাহ অভিযোগ করেন, শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
হেফাজত ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দীন রুহী বলেন, মৃত্যুর আগে জুনাইদ বাবুনগরীও শফীকে অসম্মান করেন। ‘বাবুনগরী ক্ষমতার লোভে অনেকের কাছে বলেছেন— এই বুড়া (শফী) এখনও মরছে না কেন, আমরা কখন আমীর হব? বাবুনগরী আরও অনেকবার অনেকের সামনে হুজুরকে অসম্মান করে কথা বলেছেন। জালেমরা জুলুম-অত্যাচার চালিয়েছে শফী হুজুরের ওপর। হুজুরের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। এমনকি তাকে নির্মমভাবে আহতও করা হয়েছে।’
বাবুনগরীকে উদ্দেশ্য করে রুহী বলেন, ‘আপনি বহুরুপী। আপনি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আপনি একজন বড় প্রতারক। রুমের মধ্যে একরকম, রুমের বাইরে গেলে আরেকরকম। সরকারের কার সঙ্গে কোথায় গেছেন, কার পায়ে ধরেছেন জানা আছে। কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন, কোন জায়গায় গিয়ে টাকা নিয়েছেন- সব আমাদের জানা আছে। আমরা যদি মুখ খুলি মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারবেন না।’
বাবুনগরীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘সাবধান হয়ে যান। মিথ্যা কথা বলবেন না। আপনাকে নিয়ে লোকজন ঠাট্টা করে, হাসাহাসি করে। আমাদের লজ্জা হয়।’
দেশে বহু নিষিদ্ধ-বিতর্কিত সংগঠনের সঙ্গে বাবুনগরী হাত মিলিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সময়মতো মুখ খুলব। তখন টিকে থাকতে পারবেন না। হেফাজতে ইসলামের কমিটি করেছেন। ১৫১ জনের কমিটির মধ্যে বাবুনগরীর আত্মীয় আছে ২২ জন। স্বজনপ্রীতি করে মেয়ের জামাই থেকে শুরু করে মামাতো ভাই, খালাতো ভাই সবাইকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন।’
হেফাজতের ইসলামের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে সবাইকে নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
Comments