‘কষ্টের মাঝে গান হয়েছে সঙ্গী’

ক্লাসে প্রথম। প্রত্যেক ক্লাসে তার রোল ছিল এক। সুরেলা কণ্ঠ তার। সুমধুর কণ্ঠে গাইতে পারে ভাওয়াইয়াসহ অন্যন্য গান। ষষ্ঠ শ্রেণিতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।
বাবা নারায়ণ চন্দ্র রবিদাসের সঙ্গে রাজমতি রানী রবিদাস বৃষ্টি। ছবি: স্টার

ক্লাসে প্রথম। প্রত্যেক ক্লাসে তার রোল ছিল এক। সুরেলা কণ্ঠ তার। সুমধুর কণ্ঠে গাইতে পারে ভাওয়াইয়াসহ অন্যন্য গান। ষষ্ঠ শ্রেণিতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।

সংসারের ঘানি টানতে আয় করার জন্য পঙ্গু বাবাকে নিয়ে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমায় ভাওয়াইয়া শিল্পী রাজমতি রানী রবিদাস বৃষ্টি। পড়ালেখা আর তার ভাগ্যে জুটলো না।

‘ঢাকায় গিয়ে আমি পঙ্গু বাবাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে গান গেয়ে টাকা রোজগার করতাম। ভালোই চলছিল সবকিছু। সংসারের খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা জমাতে পারছিলাম। ছোট ভাইয়ের পড়ালেখাও চলছিল,’ দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলে রাজমতি রবিদাস।

‘কিন্তু সে ভাগ্যও বেশি দূর গেল না। আমার দিকে লোকজন খারাপ নজরে তাকাতে শুরু করলেন পঙ্গু বাবাকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে আসি,’ যোগ করে সে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপাট গ্রামের ভাওয়াইয়া শিল্পী রাজমতি রানী রবিদাস বৃষ্টি তার পঙ্গু বাবা নারায়ণ চন্দ্র রবিদাস, মা পার্বতী রানী রবিদাস ও ছোট ভাই পলাশ চন্দ্র রবিদাসকে সঙ্গে নিয়ে চরম দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে।

বৃষ্টির বাবার তিন শতাংশ জমি আছে। তার ওপর একটি এক-চালা টিনের ঘর ও একটি রান্না ঘর। এক-চালা টিনের ঘরটির একপাশে তারা সবাই গাদাগাদি করে থাকেন আর একপাশে থাকে একটি গরু।

বৃষ্টির মা গ্রামে কৃষি দিনমজুরের কাজ করে সামান্য টাকা রোজগার করেন। তার ছোটভাই পড়ছে তৃতীয় শ্রেণিতে। গ্রামে মাঝে-মধ্যে গানের অনুষ্ঠান হলে বৃষ্টির ডাক আসে আর তাতে যা আয় হয়।

২০১৫ সালে বৃষ্টি ছিল ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। রোজগারের আশায় পড়াশুনা ছেড়ে গ্রাম ছাড়ে সে বছরের অক্টোবরে। নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় রাজধানী ছেড়ে আবার গ্রামে ফিরে আসে গত ফেব্রুয়ারিতে।

‘আমি পড়াশুনায় ভালো ছিলাম। স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। কিন্তু, ভাগ্য আমাকে সঙ্গ দেয়নি,’ জানায় এই কিশোরী মেয়েটি।

বলে, ‘পঙ্গু বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গান গেয়ে রোজগার করতাম সেটিও ধরে রাখা গেল না।’

বৃষ্টির বাবা নারায়ণ চন্দ্র রবিদাস ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘বৃষ্টি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে তখন আমি স্ট্রোক করে পঙ্গু হয়ে যাই। অনেক চিকিৎসা করে কোনো লাভ হয়নি।’

‘এখন সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। স্ত্রী সামান্য রোজগার করে। মেয়েও মাঝেমধ্যে গান গেয়ে আয় করে। তারপরও খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয় সবাইকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বড় স্বপ্ন ছিল মেয়েটাকে পড়াশুনা করে প্রতিষ্ঠিত করব। কিন্তু, সেটা স্বপ্নই থেকে গেল।’

বৃষ্টির মা পার্বতী রানী রবিদাস ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘মাঠে কাজ করি। সে কাজও প্রতিদিন হয় না। মেয়েটা আবারো পড়াশুনা করতে চায়। কিন্তু, সামর্থ্য নেই। সংসারে প্রতিটা মুহূর্ত এখন কষ্টের, দুঃখের।’

ভাওয়াইয়া শিল্পী রাজমতি রানী রবিদাস বৃষ্টি জানিয়েছে, সুযোগ পেলে সে আবারও পড়ালেখা করবে। নিজে পড়তে না পারলেও ছোটভাকে যেভাবেই হোক শিক্ষিত করে গড়ে তুলবে।

‘যখন কষ্টে থাকি ভাওয়াইয়া গান গেয়ে কষ্টটাকে আড়াল করার চেষ্টা করি। কষ্টের মাঝে গান হয়েছে আমার সঙ্গী,’ যোগ করে সে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago