বাণিজ্যযুদ্ধ, মহামারিতেও চীনে বিনিয়োগ বাড়ছে
![Shanghai Shanghai](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/shanghai_0.jpg?itok=xkGUfqGZ×tamp=1608280642)
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির পরও বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন বিনিয়োগ আসছে চীনে।
আজ শুক্রবার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, চলতি সপ্তাহে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে— নতুন বিদেশি বিনিয়োগের আরেকটি রেকর্ড হতে যাচ্ছে ২০২০ সালে।
এতে আরও বলা হয়েছে, চীনে গত বছর সে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল তার ৯৪ শতাংশ এ বছরের নভেম্বরে এসেছে।
চীনের বন্ড ও পুঁজিবাজারে চলতি বছর ২১৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বিভিন্ন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিদেশি কোম্পানিগুলো এশিয়ার এই দেশটিতে বিনিয়োগ করেই যাচ্ছে।
এমনকি, বৈশ্বিক মহামারিতেও বিনিয়োগকারীদের প্রধান আর্কষণ হিসেবে রয়েছে চীন।
চীন সরকার দেশটিতে বিনিয়োগের জটিলতা কমিয়ে আনায় বিনিয়োগকারীরা সেখানকার বিভিন্ন পণ্যের বাজারে ক্রমাগত বিনিয়োগ করছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ও রডিয়াম গ্রুপের বিশ্লেষক অ্যাডাম লিসেনকো সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘করোনাকালেও চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে চীনে বিনিয়োগ আসতেই থাকবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাধা-নিষেধ আরোপ করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বাইডেন প্রশাসনের চীন-নীতি কেমন হবে তাও পরিষ্কার নয়। চীনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যচুক্তি এখনো সই হয়নি। এরপরও বিদেশি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের জন্যে চীনকে বেছে নিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন বাণিজ্য
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চীন নতুন নতুন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
যেসব খাতে বিনিয়োগে বাধানিষেধ রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করে চলতি সপ্তাহে চীন একটি ছোট তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে এও বলা হয়েছে, কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে সেসব খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে।
চীনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শত বাধা সত্ত্বেও গত সাত মাসে চীনে ১৯ হাজার নতুন বিদেশি প্রতিষ্ঠান এসেছে।
চীনে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে অটোমোবাইল খাতে। করোনার আগে চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজার। যদিও দেশটিতে গত তিন বছর ধরে গাড়ি বিক্রি কমেছে তবুও বিনিয়োগকারীরা সেখানেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখছেন।
গত সেপ্টেম্বরে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’কে এক সাক্ষাৎকারে ডিয়ামলার এজি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান জার্মানিতে নয় চীনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’
গত মাসে প্রতিষ্ঠানটি চীনে ভারী ট্রাক উৎপাদনে ৪১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিল।
গত জানুয়ারিতে টেসলা ইঙ্ক চীনে তাদের প্রথম প্লান্টে উৎপাদন শুরু করে।
গত অক্টোবরে সংবাদমাধ্যম ইয়োমিউরি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নিশান মোটর কোম্পানি আগামী বছরের মধ্যে তাদের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়াবে।
চীনই ভরসা
ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদরা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্য দেশে বিনিয়োগ অথবা নিজ দেশে ফিরে আসার আহ্বান ক্রমাগতভাবে জানালেও অনেক প্রতিষ্ঠান তা করছে না।
গত সেপ্টেম্বর এক জরিপে দেখা গেছে, সাংহাইয়ের আশেপাশের ২০০ বেশি মার্কিন প্রতিষ্ঠান বলেছে তারা চীন থেকে বিনিয়োগ তুলে নিবে না।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান সরকার চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে নতুন নীতি গ্রহণ করলেও এর মিশ্র ফল পাওয়া গেছে।
বেইজিংয়ে জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূত হিদিও তারুমি গত মাসে ফিনিক্স টেলিভিশনকে বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীন থেকে বিনিয়োগ তুলে নিতে বলছি না। তাদেরকে বলছি, অন্য দেশেও বিনিয়োগ করতে।’
‘এতে চীনের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই,’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
Comments