বেরোবিতে পতাকা বিকৃতির ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জাতীয় পতাকা বিকৃতির ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম রব্বানীকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন- রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু।
আজ শুক্রবার জেলা প্রশাসক আসিব আহসান এই তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্য জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, জাতীয় পতাকা বিকৃত করে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এই অভিযোগে লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
জাতীয় পতাকা বিকৃতি ও অবমাননার অভিযোগে ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের দায়েরকৃত এজাহারে বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে জাতীয় পতাকার নকশা পরিবর্তন করে সবুজের ভেতর লাল বৃত্তের পরিবর্তে চারকোণা লাল আকৃতির পতাকা বানিয়ে ছবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এতে সংবিধানের ৪(২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং তারা স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে উপস্থাপন করে জাতীয় পতাকা মেঝেতে ও পায়ের নিচে স্পর্শ করে ছবি তুলে প্রকাশ করেছে যা সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন।
এতে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের হুকুমের আসামি হিসেবে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে দায়ী করা হয়।
লিখিত অভিযোগের অন্য আসামিরা হলেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান, সিন্ডিকেট সদস্য ও গণিত বিভাগের প্রধান হাফিজুর রহমান সেলিম, বাংলা বিভাগের প্রধান পরিমল চন্দ্র বর্মণ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মাসুদুল হক, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সোহাগ আলী ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রহমতুল্লাহ।
বেরোবি ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ তাজহাট থানায় আরেকটি লিখিত অভিযোগে করেন। এতে পতাকার লাল বৃত্তের বিকৃতি ও পায়ের নিচে পতাকা লাগানোর অভিযোগ আনা হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট তাবিউর রহমান প্রধান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, ভূগোল পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, ইতিহাস ও প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক রহমতউল্লাহ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাইয়ূম খান, ভিসির ব্যক্তিগত সচিব আমিনুর রহমানসহ ৮-১০ অজ্ঞাত উল্লেখ করে এই অভিযোগ দায়ের করাহয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতারুজ্জামান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্ত চলছে৷ তদন্ত শেষে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে বিকেলে এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে রংপুর যুবলীগের ব্যানারে সেখানে আরও একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জাতীয় পতাকা বিকৃতির দায়ে দ্রুত অভিযুক্তদের চাকরি থেকে বহিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
Comments