হিমালয়ের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে উত্তরের মানুষ

হিমালয় থেকে আসা মৃদু শৈতপ্রবাহে কাঁপছে দেশের উত্তরের পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রম। ফলে, চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়।
শীতকে উপেক্ষা করে জীবিকার টানে ছুটতে হচ্ছে মানুষকে। ছবিটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে তুলেছেন কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত।

হিমালয় থেকে আসা মৃদু শৈতপ্রবাহে কাঁপছে দেশের উত্তরের পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রম। ফলে, চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়।

আজ শুক্রবার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে টানা চারদিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে তেঁতুলিয়ায়।

গতকাল তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।

শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহানো। ছবি: কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত

গতকাল এবং আজ এই দুই জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা চালকদের ভীষণ শীত উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

সবজি খেতে কাজ করা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইয়াকুব গ্রামের নির্মল বর্মণ বলেন, ‘অনবরত বয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা হাওয়ার কারণে খেতে কাজ চালিয়ে যাওয়া খুব কষ্টসাধ্য।’

একই উপজেলার নারগুন গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এমন শীতল হাওয়ায় মাঠে কাজ করা কঠিন ব্যাপার। এবার কিছুটা দেরিতে শীত এসেছে। কয়েকদিন আগে কুয়াশা বেশি থাকায় ঠাণ্ডার মাত্রা কম ছিল। কিন্তু গত তিন থেকে চার দিনে কুয়াশা কমে যাওয়ায় ঠাণ্ডার মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে।

রিকশা চালক মকবুল হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় দিনের বেলাতেও রিকশা চালানো যাচ্ছে না। তারপরেও চালাতে হচ্ছে। কারণ, আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি, প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করেই সংসার চালাই।’

পঞ্চগড়ের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে সবাই একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীর ভিড় বেশি দেখা গেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল আলম চয়ন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৩০জন শিশু রোগী ভর্তি আছে এবং ২৪০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক রোগী যাদের বেশিরভাগ শীতজনিত অথবা শ্বাসপ্রশ্বাসের সংক্রমণে ভুগছেন।’

শীতের তীব্রতা বাড়লেও থেমে নেই মানুষের ছুটে চলা। ছবি: কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত

সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘এমনিতেই শীতকালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ে। কারণ এ সময়ে শিশু ও বয়স্ক মানুষের শ্বাসনালীতে সহজে সংক্রমণ ঘটে। যেসব শিশু কিংবা বয়স্ক মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এখন কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিও আছে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রাপ্ত দশ হাজার আটশ কম্বল জেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, পাঁচ উপজেলায় প্রত্যেক ইউএনওকে ছয় লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে দরিদ্রদের মাঝে লেপ ও কম্বল বিতরণ করতে পারে।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, জেলায় এ পর্যন্ত ২১ হাজার দুইশ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রাপ্তিসাপেক্ষে আরও বিতরণ করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবতাব আহমেদ জানান, রবি শস্যের জন্য এখনো তেমন বিরূপ আবহাওয়া দেখা দেয়নি। ফলে, ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা আপাতত দেখছি না।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ জানান, তেঁতুলিয়ায় টানা চারদিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

‘আকাশে মেঘ ও কুয়াশা কমে গেছে এবং মৃদু শৈতপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সাইবেরিয়া থেকে আসা হিমেল হাওয়া হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এই এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ এমন আবহাওয়া থাকতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago