সক্ষমতা বাড়লেও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়েনি
জুনের মাঝামাঝি সময়ে যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চলেছিল তখন দেশের ৪৯টি ল্যাবে প্রতিদিন প্রায় ১৬ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। জুনের শেষের দিকে ল্যাবের সংখ্যা বেড়ে ৬৬টিতে পৌঁছালে করোনা পরীক্ষাও বেড়ে যায়। প্রতিদিন পরীক্ষা হয় প্রায় ১৮ হাজার।
এরপর ছয় মাস কেটে গেছে, বেড়েছে ল্যাবের সংখ্যা। ৬৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ল্যাব সংখ্যা ১৩৭। তবে কমেছে প্রতিদিন করোনা পরীক্ষার সংখ্যা।
শীতকালের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার। তবুও গত বৃহস্পতিবার মোট ১৩ হাজার ১৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষা করাতে মানুষের অনাগ্রহই পরীক্ষা কমার মূল কারণ। এর জন্য তারা দায়ী করেছেন সরকারের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অভাবকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নাজির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হতো, লক্ষণ থাকলে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে এখন আর এধরনের কিছু শুনতে পাই না।’
তিনি জানান, মানুষ পরীক্ষা করাতে না যাওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে লক্ষণবিহিন সংক্রমণ।
বর্তমানে দেশের ১১২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও জেনেক্সপার্ট মেশিনে ১৬টি হাসপাতালে এবং এন্টিজেন কিট দিয়ে ১০টি হাসপাতালে পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে।
গত ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় মৃত্যু হয়। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ১৯২ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং করোনাভাইরাসতে মোট চার লাখ ৯৬ হাজার ৯৭৫ জন সংক্রমিত হয়েছেন। গত ২১ জানুয়ারি দেশে করোনা পরীক্ষা শুরু হয় এবং ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়।
www.worldometers.info এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে ১৭ হাজার ৩৯৮ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ছয় লাখ ২৫ হাজার ১৬৪, ইতালিতে তিন লাখ ৮২ হাজার ৭২৯ জন এবং ভারতে এক লাখ ছয় হাজার ৬৩৯।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে। ‘তবে মানুষ যদি পরীক্ষা করাতে না আসে তাহলে আমরা কী করতে পারি? মহামারি মোকাবিলা করা শুধুমাত্র একটি মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। বরং এর জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’
‘পরীক্ষা বিনামূল্যে করা উচিত’
মো. খায়রুল (ছদ্মনাম) ও তার স্ত্রীর জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা। তারা খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ পাচ্ছেন না। কিন্তু তারা করোনা পরীক্ষা করারননি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারিক চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
একজন গৃহবধূ লায়লা বেগম লতা জানান, তিনি করেনা পরীক্ষাকে ‘ঝামেলা’ বলে মনে করেন। সম্প্রতি তার স্বামীর করোনা পজিটিভ হয়েছে এবং তার ও তার মেয়ের করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে যাই না এবং আমার শারীরিক অবস্থাও খারাপ না। তাই পরীক্ষা করিনি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সবার পরীক্ষা বিনামূল্যে করা উচিত। আমাদের মনে রাখতে হবে, আরও বেশি পরীক্ষা ছাড়া আমরা মহামারিটি মোকাবিলা করতে পারব না। এটি আরও দীর্ঘায়িত হবে।’
Comments