শীতে খড়কুটোর আগুনই ভরসা

নিদারুণ কষ্টে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষ
প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র নেই। তাই খড়কুটোর আগুনই ভরসা হয়েছে শীতার্ত দুস্থ মানুষের। ছবি: স্টার

কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় কাবু হয়ে উঠেছে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের জনজীবন। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কয়েক লাখ শীতার্ত মানুষের কষ্ট বেড়েছে নিদারুণ। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুটোর আগুনই ভরসা হয়েছে শীতার্ত দুস্থ মানুষের। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে দিনে ও রাতে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন তারা। ঠান্ডার কারণে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে-খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তাপমাত্রা রেকর্ড-কিপার সুবল চন্দ্র রায় আজ শনিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকাল ৮টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সকালে ঘনকুয়াশায় চারদিক ঢেকে ছিল।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বত্রিশহাজারী গ্রামের দিনমজুর মনসুর আলী (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ ভোর থেকে কনকনে ঠান্ডার কারণে তারা কাবু হয়ে উঠেছেন। বিছানায় শুয়ে থাকতেও তারা ঠান্ডায় অস্থির হয়ে উঠছেন। খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিয়েও ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর গোকুন্ডা এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৫৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বেড়াত হতে পারছি না। জমিতে গিয়ে কাজ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে নদী এলাকায় হিমেল বাতাস বইছে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় আমাদেরকে নিদারুণ কষ্টে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে।’

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চর অষ্টমী এলাকার দিনমজুর শরিফা বেওয়া (৪৮) জানান, তার কোনো কম্বল নেই। ঠান্ডায় তিনি কাবু হয়ে পড়েছেন। ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারছেন না কাজের জন্য। নিজের কোনো সামর্থ্য নেই কম্বল কেনার। আগের মতো খড়কুটোও পাওয়া যাচ্ছে না।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর চর সারডোব এলাকার কৃষক হেদায়েত আলী (৫০) জানান, ঠান্ডার কারণে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না খেতে। আধা ঘণ্টা কাজ করলেই শরীর ঠান্ডায় বরফ হয়ে যাচ্ছে। আজ সকাল থেকে ঠান্ডার প্রকোপ আরও বেড়েছে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান মতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চরাঞ্চলের সবাই ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র নেই। কম্বলের জন্য আমার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন শীতার্তরা। আমি মাত্র ২৫টি সরকারি কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। যেখানে চাহিদা দেড় হাজার।’

সরকারি ও বেসরকারিভাবে চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক জানান, লালমনিরহাটের জন্য আরও ৬০ হাজার ও কুড়িগ্রামের জন্য আরও এক লাখ কম্বলের চাহিদা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব শীতবস্ত্র শীতার্ত দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। সেই সঙ্গে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকিও রয়েছে মারাত্মকভাবে। হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য পৃথক ওয়ার্ড চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

4h ago