রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মাদকসহ আটক

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সরকারি গাড়িতে ফেনসিডিল পরিবহনের সময় রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

আজ শনিবার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তাদের চাপে আটক বিএসসি ক্যাডার কর্মকর্তাকে থানায় সোপর্দ করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে আটক করার পরে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিচয় নিশ্চিত করতে মো. নুরুজ্জামানকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর সরকারি কর্মকর্তারা তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেননি। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত নুরুজ্জামানকে সার্কিট হাউসে রাখা হয়েছে।’

তবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি যে, আমরা গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করছি। আইনের নিজস্ব গতি রয়েছে। আইনের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার আমার কোনো এখতিয়ার নেই।’

মো. নুরুজ্জামান এখনো সার্কিট হাউসে অবস্থান করছেন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সার্কিট হাউসে আছেন বলে স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক।

রাজশাহীর একটি সরকারি গাড়িতে ফেনসিডিল বহন করা হচ্ছে— এমন খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা ব্রিজের টোল প্লাজায় একটি চেকপয়েন্ট স্থাপন করেন। রাত সাড়ে ৮টায় মো. নুরুজ্জামান যখন তার সরকারি পাজেরো গাড়ি চালিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা শিবগঞ্জ থেকে রাজশাহী ফিরছিলেন তখন তাকে আটক করা হয়।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাড়িতে চালকের পাশের সিটে ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার আব্বাস বাজার গ্রামের ওহিদুজ্জামান লাজুক (৩৮) নামে এক ওষুধের দোকানের কর্মচারী। তার পায়ের কাছে কোমল পানীয়র পাঁচটি বড় বোতলে ছিল ছয় দশমিক আট লিটার ফেনসিডিল। নুরুজ্জামান নিজেকে সরকারের উপসচিব এবং লাজুককে তার বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাজুক কোনো ওষুধের দোকানের কর্মচারী নন। তিনি একজন মাদকচোরাকারবারি। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মাদকসেবীদের বাড়িতে তিনি মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতেন।

তারা আরও বলেন, লাজুককে জব্দকৃত ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নেওয়া হয়। নুরুজ্জামানের পরিচয় নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সার্কিট হাউসে নেওয়া হয়েছিল। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তারা নুরুজ্জামানকে রেখে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সার্কিট হাউস ত্যাগ করতে বলেন।

এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, ‘নুরুজ্জামান সার্কিট হাউসে থাকাকালে সার্কিট হাউজের গেটগুলোতে আমাদের কর্মকর্তারা সারা রাত অবস্থান করেছেন। সরকারি কর্মকর্তারা তাকে (নুরুজ্জামান) ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলেছেন।’

‘সরকারি শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে’— বলেন তিনি।

সূত্র জানিয়েছে, মামলা দায়েরের পরে নুরুজ্জামানকে সার্কিট হাউস থেকেই সরাসরি আদালতে নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা মামলা করার পরে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

আটকের পরে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান, তাই তারাই আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। যে কারণে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

মো. নুরুজ্জামানের বাড়ি পাবনা জেলায়। তিনি ২৫তম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার। ২০১৫ সালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালে প্রায়ই তিনি মাদকদ্রব্য কেনার সরকারি যানবাহনে বাঘা ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যাতায়াত করতেন।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

2h ago