দীপ্ত টিভির পর্দায় প্রামাণ্যচিত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

মা, মাটি ও মানুষ এই তিনটি বিষয় নিয়েই বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবন। দশ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। তাই পরিবারে বড় ভাই নামে পরিচিত। পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও বড় ভাই নামে পরিচিত। দেশের সেবায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে ১৯৭২ সালে সাভারে গড়ে তুলেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

শৈশবে মায়ের কাছে শিখেছিলেন কীভাবে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে হয়। উনিশশো তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সময় তার মা অগণিত মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন। তখনকার জনপ্রিয় এই ছাত্রনেতা মেডিকেলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন নানাবিধ মামলায় জড়ায় তাকে। একসময় আইয়ুব খানের সামরিক শাসক তার জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তাই সামরিক শাসকের চোখে ধূলি দিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে শুরু হয় আরেক সংগ্রামী জীবন। লন্ডনে অল্পদিনের মধ্যেই একজন দক্ষ তরুণ সার্জন হিসেবে পরিচিতি পান।

এরমধ্যে বাংলাদেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তখন ব্রিটিশ সরকার রাষ্ট্রহীন নাগরিক হিসেবে তাকে একটি ছাড়পত্র দিলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বন্ধু ডা. মুবিনকে নিয়ে ভারতে যান। ভারতে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ক্যাপ্টেন আখতার ও দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি ছিলো বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র ফিল্ড হাসপাতাল।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. মুবিন ভারতের কলকাতা থেকে সরাসরি চলে আসেন আগরতলার এই বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে রেশমা, আসমা, ইরা কর, সুলতানা কামাল, খুকুসহ অনেকেই ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. মুবিনের সঙ্গে কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাভারে প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেন। এ সময় তিনি লক্ষ্য করেন, অসহায় ও দরিদ্ররা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে এলেও ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকে না। তাই স্বল্পমূল্যে ওষুধ বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠা করেন গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল ল্যাব। দেশে তখন কোনো ওষুধনীতি ছিল না। ফলে, ওষুধ কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মতো ওষুধের দাম নির্ধারণ করতো। ১৯৭৫ সালে একটি ওষুধ নীতি প্রণয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করেই ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে ওষুধ নীতি প্রণয়নের কাজটি বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ওষুধনীতি প্রণয়নে তৎকালীন এরশাদ সরকারকে বাধ্য করেছিলেন তিনি। বর্তমানে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার বিষয়সহ মোট ৩৫টি বিষয়ের ওপর উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

সর্বশেষ ২০২০ সালে বাংলাদেশ যখন মরণ-ব্যাধি কোভিড-১৯ নিয়ে দিশেহারা, তখন দেশের মানুষকে রক্ষা করতে করোনাভাইরাস শনাক্তে স্বল্পমূল্যে কিট আবিষ্কার করে তার প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে দীর্ঘ কর্মময় জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কিন্তু, চিন্তা ও মননে এখনো তিনি একজন তরুণ। জীবনের এই প্রান্তে তার লক্ষ্য একটি ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সাধারণ মানুষও ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে পারবেন। এই আরাধ্য কাজও শেষ করে যেতে চান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তার দীর্ঘ এই পথচলা নিয়ে নির্মিত হয়েছে একটি জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী’। আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর রাত ১১টায় দীপ্ত টিভিতে প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচার হবে।

প্রামাণ্যচিত্রটির গবেষণা, পাণ্ডুলিপি ও পরিচালনা করেছেন রঞ্জন মল্লিক। প্রযোজক ব্রাত্য আমিন ও নির্বাহী প্রযোজক আবু রেজওয়ান ইউরেকা।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

12h ago