পাথর উত্তোলনের অনুমোদন দাবিতে সিলেটে ‘পরিবহন শ্রমিকদের’ ধর্মঘট
পাথর উত্তোলনের দাবিতে সিলেট বিভাগে শুরু হয়েছে টানা তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘট। আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ‘বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র ব্যনারে এ ধর্মঘটের শুরু হয়। এতে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গতকাল বিকালে জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে আলোচনা ফলপ্রসু না হওয়ায় তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেননি।
সিলেট শহরের বাসিন্দারা মনে করছেন, সরকারকে চাপে ফেলে পাথর উত্তোলনের অনুমতি আদায় করতে পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করছেন পাথর ব্যবসায়ীরা।
সূত্র জানায়, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রাকৃতিকভাবে পাথর পাওয়া গেলেও তা তুলতে যন্ত্রের সাহায্যে অবৈধ উপায় বেছে নেন ব্যবসায়ীরা। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে চলতি বছরের শুরু থেকে স্থানীয় প্রশাসন পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে। এ বছর সিলেটের তালিকাভুক্ত পাথর কোয়ারিগুলো ইজারা দেয়নি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো।
বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের মৌসুম। এ সময় সিলেটের ছয়টি কোয়ারির প্রতিটিতে গড়ে আড়াই লাখের মতো মৌসুমি শ্রমিক কাজ করতে আসেন। এ ছাড়া, পরিবহন শ্রমিক এবং স্টোন ক্র্যাশার শ্রমিকরাও রয়েছেন। পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এখন বেকার আর তাই কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবিতে আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। পরিবহন শ্রমিকরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আশ্বাস চেয়েছিলাম যে একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার জন্য যার মধ্যে কোয়ারি চালুর চেষ্টা করবেন তিনি। কিন্তু তিনি আশ্বস্ত করতে না পারায় আমরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করছি।’
এর আগে একই দাবিতে গত ৯ ডিসেম্বর থেকে দুই দিন সিলেটে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হয়। দাবি আদায় না হওয়ায় পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে এ ধর্মঘট ডাকে পাথর সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মূলত আমরা সবাই শ্রমিক। তা ছাড়া, আমরা সবাই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত। এক ধরনের শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা বাকিদের দেখতে হয়। তাই পাথর পরিবহন শ্রমিকদের কথা বিবেচনায় আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ধর্মঘটে সম্পৃক্ত হয়েছি। ফেডারেশন থেকেও সে রকম নির্দেশনা রয়েছে।’
এ ব্যাপারে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি ও সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে ট্রাক শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করে ধর্মঘট পালন করে সড়ক অবরোধ করে, তখন আমাদেরও অসুবিধায় পড়তে হয়। আর তাই তাদের দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আন্দোলন করা ছাড়া কোনো উপায় না থাকায় আমরাও একমত হয়েছি।’
পাথর শ্রমিকদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সম্মিলিত এ দাবিকে অনৈতিক ও অন্যায্য হিসেবে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম।
তিনি বলেন, দেড় দশকের বেশির সময়ে সিলেটের কোনো কোয়ারি থেকে পরিবেশসম্মতভাবে পাথর উত্তোলন করা হয়নি। যন্ত্রের সাহায্যে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের দীর্ঘ আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের পরে উচ্চ আদালত অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পাথর ব্যবসায়ীরা তা মানেননি। ২০১৫ সালে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হলেও চলতি বছর পর্যন্ত সেখানে বন্ধ হয়নি যন্ত্র ব্যবহারে পাথর উত্তোলন।
আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘এ ছাড়া, সিলেটের বৈধ-অবৈধ কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ২০১৭ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৮০ জন শ্রমিক। সেসব ঘটনায় কোনো পাথর ব্যবসায়ীকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়নি। পাথর ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই অযান্ত্রিক ও পরিবেশসম্মত উপায়ে পাথর উত্তোলন করবেন না। তারা নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করছেন।’
Comments