নীলকমলের উপর কাঠের সেতুই ভরসা সীমান্তবাসীর
নীলকমল নদীর উপর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্থের কাঠের সেতুটিই ভরসা সীমান্তবাসীর। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাখারজান সীমান্তের ১০২টি পরিবারের মানুষ এই কাঠের সেতু দিয়ে মুল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের; কিন্তু কোনভাবেই দাবি পূরণ হচ্ছে না সীমান্তবাসীর।
কাঠের সেতুটি লাগোয়া এক পাশে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ৯৪০ ও অপর পাশে পিলার ৯৪১। মাঝেমধ্যে বিএসএফ ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিতে আসে এখানে। নাখারজান সীমান্ত গ্রামটির একদিকে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়া আর তিন দিকে ঘিরে রয়েছে নীলকমল নদী। এই নদীটি এঁকেবেঁকে কখনো ভারতে আবার কখনো বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি ছোট হলেও বর্ষাকালে দুই কূল ছাপিয়ে যায়। কিন্তু খরা মৌসুমে শুকিয়ে জল শূন্য হয়ে যায়।
স্থানীয় কৃষক আনিসুর রহমান (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত নীলকমল নদীর উপর কাঠের সেতু ছিল। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আর কাঠের সেতু নির্মাণ হয়নি। পরে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে চলাচল করতে হয়েছে অনেক বছর। ২০১৬ সালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী মিলে আবার কাঠের সেতু তৈরি করেছে। কিন্তু আমাদের দাবি কংক্রিটের সেতু।
স্থানীয় কৃষক আশরাফুল হক (৪৮) জানান, এই সেতু দিয়ে শুধু তারা চলাচল করেন না। সীমান্তে কাঁটাতারের বাইরে থাকা ভারতীয়রাও এই সেতু ব্যবহার করেন। নাখারজান সীমান্ত গ্রামের সঙ্গে রয়েছে ভারতের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার সেউতি পার্ট-২ গ্রাম। ভারতীয় এই গ্রামটি কাঁটাতারের বাইরে রয়েছে।
ভারতীয় গ্রামটিতে দেড় শতাধিক পরিবারে ৬০০ মানুষ বসবাস করেন। সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের গেট বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয়রা বাংলাদেশের হাট-বাজারে আসেন এই সেতু দিয়ে। কাঠের এই সেতুটি বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতির একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ভারতের সীমান্ত গ্রাম সেউতি পার্ট-২ এর কৃষক আব্দুস সামাদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাঁটাতারের গেট দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে সবসময় যাতায়াত করতে পারি না। বাংলাদেশের গ্রাম নাখারজানের সব মানুষই আমাদের পরিচিত। ওই গ্রামের অনেকেই আমাদের আত্মীয়। আমরাও সেতুটি ব্যবহার করে বাংলাদেশে হাট-বাজারে যাই। সীমান্তে সম্প্রীতি নিয়ে আছি। আমাদের মাঝে কোনো বিবাদ নেই। একে অপরের বিপদে ছুটে আসি। নীলকমলের উপর কংক্রিটের সেতু হলে আমাদের জন্যও ভালো হবে।’
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নীলকমলের উপর অনেক আগেই কংক্রিটের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএসএফের বাধার কারণে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নীলকমলের উপর সেতু নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে ভারতীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে অনুমতি পেলে সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
Comments