সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন ঘাটতির শঙ্কা

মূল অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন প্ল্যান্ট প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকায় সরকারি হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড অস্থায়ী ভিত্তিতে ভারত থেকে ট্যাংকারে করে অক্সিজেন এনে হাসপাতালে সরবরাহ করছে।

শীতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু যখন বেড়ে চলেছে, তখনই অক্সিজেন সরবরাহে এমন পরিস্থিতির তৈরি হলো।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন তরল অক্সিজেনের চাহিদার রয়েছে প্রায় ১০০ টন। এর ৯০ শতাংশই সরবরাহ করে লিন্ডে। ফলে, এই প্রতিষ্ঠানের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত লিন্ডের এই অক্সিজেন প্ল্যান্টটি গত ১১ ডিসেম্বর থেকে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

তারা জানান, প্ল্যান্টটি ঠিক করে পুনরায় উত্পাদন শুরু করতে তারা কাজ করছেন। তবে, এর জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে সরবরাহ ঠিক রাখতে তারা বিকল্প উপায় ব্যবহার করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তারা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও জরুরি ভিত্তিতে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

তারা বলেন, সরকার যদি অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করত, তাহলে বিপর্যয় হতে পারত।

নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তাদের জীবন বাঁচাতে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান কর্মকর্তারা। 

সিলিন্ডারের সাহায্যে একজন রোগীকে প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ ছয় লিটার হারে অক্সিজেন দেওয়া যায়। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে অনেক বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব।

গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে অক্সিজেন আমদানি করা হচ্ছে জানিয়ে লিন্ডা বাংলাদেশ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সায়িকা মাজেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের রূপগঞ্জ প্ল্যান্টে মেরামতের কাজ চলছে। তবে, ইতোমধ্যে আমরা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করছি এবং হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করছি।’

তিনি জানান, তারা প্রতিদিন প্রায় ৬০-৮০ টন অক্সিজেন আনছেন এবং প্ল্যান্টে পুনরায় কাজ শুরু করার আগ পর্যন্ত অক্সিজেন আমদানি অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়াও, চট্টগ্রামে লিন্ডের আরেকটি প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ২০ টন অক্সিজেন হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। সায়িকা মাজেদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে মেডিকেল অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিদিন প্রায় ১০০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। এর ৯০ শতাংশ সরবরাহ করে লিন্ডে বাংলাদেশ। বাকি ১০ শতাংশ সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ফরিদ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘উৎপাদন বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে। অন্যথায় পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারত।’

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, ‘এখনো কিছু উদ্বেগ রয়েছে। কোনোভাবে সরবরাহ ব্যাহত হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, কোভিড-১৯ রোগীদের ১৫-২০ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করার এবং অক্সিজেন সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। প্রায় ১৫ শতাংশ রোগীর মধ্যে গুরুতর লক্ষণ দেখা যায় এবং পাঁচ শতাংশের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের প্রয়োজন হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ ডিসেম্বর সারাদেশে প্রায় ৩০১ জনকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য মোট ৫৬৮টি ডেডিকেটেড আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোর ২৮৬টি শয্যার মধ্যে ২১১টিতে রোগী ভর্তি হয় ওই দিন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কনসালটেন্ট ডা. মোশতাক হুসেইন জানান, অন্যান্য জেলার হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধার অভাব এবং গুরুতর রোগীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার আইসিইউগুলোতে চাপ পড়ছে।

তিনি আরও জানান, অন্যান্য জেলা থেকে রোগীরা বিভিন্ন কারণে ঢাকায় চলে আসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

Gold prices in Bangladesh continue to soar, leaving many to wonder why the precious metal costs more here than in neighbouring India or the global trading hub Dubai.

1h ago