কসমেটিক শরীরের জন্যে উপকারী না ক্ষতিকর

Skin care
স্টার ফাইল ফটো

মানুষ প্রায় ৬ হাজার বছর ধরে রূপচর্চার জন্য প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে বলে ধারণা করা হয়। আধুনিক জীবনে দিনে দিনে প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি এগুলো ব্যবহারে সৃষ্ট পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকিও বাড়ছে।

অনেক গবেষক ইতোমধ্যেই বাছ-বিচার না করে প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করার প্রবণতাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বর্তমানে সারা বিশ্বে অসংখ্য কোম্পানি নানা ধরনের প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুত করছে। এসব সামগ্রী তৈরি করতে কমবেশি ১৩ হাজার প্রকার রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত এই রাসায়নিক উপাদানই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা তৈরির জন্য দায়ী।

বিশ্বব্যাপী ওষুধের রাসায়নিক উপাদান নিয়ে যতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর অনুমোদন দেওয়া হয় প্রসাধনীর ক্ষেত্রে ঠিক ততটা নিয়মকানুন মানা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় না।

বাংলাদেশে ভেজাল প্রসাধন সামগ্রীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রসঙ্গ বিবেচনা না করলেও, উন্নত দেশগুলোতেও অনুমোদিত প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের মাত্র ১০ শতাংশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা হয়ে থাকে।

এসব গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কোনো প্রসাধন সামগ্রীর বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়ে থাকে। কাজেই প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের ফলে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে ব্যক্তিগত সচেতন‌‌তা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রতিদিন ব্যবহার করা প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে সাধারণত যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় এবং সেগুলো থেকে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, আসুন সে সম্পর্কে একটু ধারনা নিই।

ইউরিয়া: বেবি কেয়ার থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রসাধন সামগ্রীতেই এটির উপস্থিতি রয়েছে। এর কারণে ত্বকের অ্যালার্জি, ক্যান্সার, এমনকি বিকলাঙ্গ শিশুও জন্ম নিতে পারে।

ডাই-অক্সেন: সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, মাউথওয়াসে থাকে। ত্বক, স্তন ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে।

ফরমালডিহাইড: নষ্ট হওয়া রোধ করতে সব ধরনের প্রসাধনীতেই ফরমালিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি অ্যালার্জি ও ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে থাকে।

ভারী ধাতু: লেড, আর্সেনিক, কেডমিমাম, নিকেল, মারকারি ইত্যাদি ভারি ধাতু রঙিন প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্বল্পমেয়াদে এগুলো ত্বকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এগুলো ত্বকের নিচে জমার পর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, বমি, মাথা বাথা, ডাইরিয়া,  ক্যান্সার, হাড় ক্ষয়, স্নায়ু, লিভার ও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।

প্যারাবেন: এটি জীবানুনাশক গুণের কারণে পচন রোধে প্রসাধনীর উপাদান হিসেবে থাকে। সাধারণত ডিওডরেন্ট, লোশন ও চুলের প্রসাধন সামগ্রীতে থাকে। ক্যান্সার ও ত্বকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

থেলেট: নেল পলিশ, লোশন, পারফিউম, চুলের প্রসাধন সামগ্রীতে থাকে। এটি স্তন ক্যান্সার ও বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দেওয়ার কারণ হতে পারে।

ট্রাইক্লোসান: সাবান ও শ্যাম্পুতে জীবাণুনাশক হিসেবে থাকে। হরমোনজনিত সমস্যা, লিভার ও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।

রঙ ও সুগন্ধি: প্রসাধনী তৈরিতে নানা ধরনের কৃত্রিম রঙ ও সুগন্ধি যোগ করা হয়। এগুলো ত্বকের অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

উল্লেখিত রাসায়নিক উপাদানগুলো ছাড়াও আরও অনেক রাসায়নিক দ্রব্য দৈনন্দিন ব্যবহার করা প্রসাধনীতে থাকে। 

প্রতিরোধে করণীয়

* ত্বকের জ্বালাপোড়া, লাল হয়ে যাওয়া অ্যালার্জির লক্ষণ। কোনো প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে বা কয়েকদিনের মধ্যেই এসব লক্ষণ আঁচ করা যায়। আঁচ করার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দিন।

* তবে দীর্ঘ মেয়াদে যেসব শারীরিক সমস্যার তৈরি করে তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন না হলে মেকআপ নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রয়োজন শেষে যত দ্রুত সম্ভব মেকআপ পরিষ্কার করুন।

* নতুন প্রসাধন সামগ্রী কেনার সময় গায়ে লিখিত উপাদানগুলো দেখে নিতে পারেন। ব্যবহারের আগে ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

* সাবান ও সুগন্ধি কম ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দৈনন্দিন ব্যবহারে শুষ্ক ত্বক মসৃণ করার জন্য প্রসাধনী কোম্পানির তৈরি সামগ্রী ব্যবহার না করে, প্রাকৃতিক তেল যেমন অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

এম আর করিম রেজা, ত্বক এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

10h ago