বস্তির আগুনে সব হারালেন দিনমজুর আবুল কালাম

দিনমজুর আবুল কালাম (৫৫) গত ৩০ বছর ধরে স্ত্রী রোকেয়াসহ (৫০) পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে পল্লবীর তালতলা বসবাস করে আসছেন। কিন্তু, সোমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাদের বস্তিঘরসহ মোট ১৭০টি ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে, ২০০৯ সালের পরে আবারও তিলে তিলে গড়ে তোলা সব সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন আবুল কালাম।
আগুনে পোড়া ঘরের জায়গায় চারটি বাঁশের খুঁটি পাতলা কাপড় টাঙিয়ে সন্তানদের নিয়ে আছেন আবুল কালাম। ছবি: শাহীন মোল্লা

দিনমজুর আবুল কালাম (৫৫) গত ৩০ বছর ধরে স্ত্রী রোকেয়াসহ (৫০) পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে পল্লবীর তালতলা বসবাস করে আসছেন। কিন্তু, সোমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাদের বস্তিঘরসহ মোট ১৭০টি ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে, ২০০৯ সালের পরে আবারও তিলে তিলে গড়ে তোলা সব সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন আবুল কালাম।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালতলা বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, আবুল কালাম তার আগুনে পোড়া ঘরের জায়গায় চারটি বাঁশের খুঁটি পুতেছে। তার মধ্যে পাতলা একটি কাপড় টাঙিয়ে ও মাটির ওপরে কিছু কাগজ বিছিয়ে সন্তানদের নিয়ে বসে আছেন। শীতে আবুল কালামের গলা বসে গেছে এবং তার স্ত্রী তখন ঠান্ডায় কাঁপছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার স্ত্রী ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত।

আবুল কালাম বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে ঢাকায় আছি। অনেক কষ্ট করেছি। কাজের সন্ধানে ঘুরেছি দিনের পর দিন। পরে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। তারপর বিয়ে করে সংসার শুরু করি। কিন্তু, ২০০৯ সালে বস্তিতে আগুন লাগলে সব হারিয়ে ফেলি। তারপর আবারও সংগ্রাম শুরু করি। ওই সময়টা প্রায় ৬ মাস আমাদের কোনো ঘর ছিল না। পোড়া ঘরের সামনে, আবার কখনো রাস্তায় দিন কেটেছে আমাদের। পরে স্ত্রী আর আমি কাজ করে ধীরে ধীরে একটা ঘর বানাই। তাও আবার কেড়ে নিয়েছে আগুন। এখন আমি নিঃস্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগার সময় আমরাসহ বস্তিবাসীর বেশিরভাগ সদস্য ঘরের বাইরে ছিল। তাই কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে ঘরের জায়গায় বসে শীতে কষ্ট পেতে হচ্ছে। গরম কোন পোশাক নেই আমাদের। সব পরিবারকে একটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তা দিয়ে একটি পরিবারের সবার শীত নিবারণ সম্ভব নয়।’

বস্তির আরেক বাসিন্দা সুমা বেগম বস্তির সামনে দাঁড়িয়ে দুই সন্তানের জন্য গরম কাপড় খুঁজছিলেন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন যদি কেউ গরম কাপড় দিয়ে যায়।

সুমা একজন পোশাক শ্রমিক এবং তার স্বামী রিকশা চালক। বস্তির কাছাকাছি তার কারখান। ঘটনার দিন বাসায় এসে দুপুরের খাবর খেয়ে আবার কাজে যান তিনি। পরে এসে জানতে পারেন আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের সব। এখন তাদের কোনো ঘর নেই। তাই সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।

সুমা বলেন, ‘বস্তির মাটিতে কোনো রকমে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। আগুন লাগার পর বস্তিতে বিদ্যুৎ, পানি নেই। তাই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঘর করার মতো সামর্থ্য নেই। করোনার কারণে আয় ছিল না। তবে, নতুন করে ঘর করতে পারলে হয়তো তখন একটু স্বস্তি পাব। বাসা ভাড়া করে থাকার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই।’

আগুন লাগার পর ৩৫ কেজি চাল এবং কিছু থালা-বাসন এবং একটি কম্বল দিলেও তাদের এগারো বছরের উপার্জন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago