আহমদ শফীর মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি ৩১৩ আলেমের

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য দুই দিন ধরে চরম নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়েছে দাবি করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন দেশের শীর্ষ ৩১৩ আলেম-পীর মাশায়েখ।
ছবি: সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য দুই দিন ধরে চরম নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়েছে দাবি করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন দেশের শীর্ষ ৩১৩ আলেম-পীর মাশায়েখ।

আজ শুক্রবার মহিব্বিনে আহমদ শফী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রচার সচিব মাওলানা মুফতি আব্দুস ছাত্তারের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ‌হাটহাজারী মাদ্রাসায় আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস লুটতরাজের মাধ্যমে আহমদ শফীর রুম ভাঙচুর, মাদ্রাসার মুহাদ্দিসদের রুম ভাঙচুর ও তাদেরকে শারীরিকভাবে মারধরের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা পুরো কওমি অঙ্গনকে কলুষিত করেছে। জামাত শিবিরের ক্যাডার ও মানহাজী ও চরমপন্থিরা এ চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। মূলত হাটাহাজারী মাদ্রাসার ক্ষমতা দখল, কওমি অঙ্গনকে দখল ও রাজনৈতিকভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্লাটফর্ম তৈরি করতে এবং কওমি মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-তরুণ প্রজন্ম সরকারবিরোধী ইস্যু সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের পতন তরান্বিত করতে বিরোধী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শাহ আহমদ শফীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়াই তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আজ যখন শাহ আহমদ শফীর পরিবার হত্যার বিচার চেয়ে ধারে ধারে ঘুরছে, যখন বিচারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হল, তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি এক শ্রেণীর ক্ষমতা লোভী ও রাজনৈতিক এজেন্ডা বস্তবায়নকারীরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিকে অস্বীকার করে শাহ আহমদ শফীর মরদেহ কবর থেকে তুলতে হবে বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। একইসঙ্গে সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে শায়খুল ইসলামের খুনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি এবং দোষীদেরকে গ্রেপ্তারপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।’

বিবৃতিতে ওলামায়ে কেরাম-পীর মাশায়েকরা বলেন, ‘গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় জুনাইদ বাবুনগরী তার আপন মামাকে ও হাটহাজারী মাদ্রাসার কিছু নিরীহ ওস্তাদদের সঙ্গে নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তার মাধ্যমে তিনি একটি কথাই বারবার তুলে ধরেছেন, তা হলো- শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তবে তদন্ত হলে সমস্যা কোথায়? স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তদন্তের ফলাফলই তো বেরিয়ে আসবে। তাহলে তিনি কেন মামলা প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন এবং প্রত্যাহার করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিচ্ছেন?’

‘এতে করে বুঝা যায়, ডাল মে কুছ কালা হ্যাঁয়। যদি তার দাবিতে সত্য হয়ে থাকে তাহলে তার উচিত ছিল এ মামলা ও তদন্ত সব কিছুতে সাধুবাদ জানানো। তা না করে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি-ধমকি দিয়ে এটাই প্রমাণ করলেন যে, শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু অস্বাভাবিক হয়েছে। হাটহাজারী মাদ্রাসার কোনো ওস্তাদ মামলার অভিযুক্ত না হলেও সংবাদ সম্মেলনে হাটহাজারী মাদ্রাসার ওস্তাদদেরকে উপস্থিত রেখে মূলত নিরীহ আলেম ওলামাদেরকে বিতর্কে জড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং পাবলিকের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার পায়তারা করছেন’, বিবৃতিতে বলেন আলেমরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘৩৬ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে যে মামলা হয়েছে তারা সবাই শাহ আহমদ শফীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে তারা আজ বিভিন্ন আলেমদের নামে নিজেদের বিবৃতি দিচ্ছেন মিডিয়াতে। যারা শাহ আহমদ শফীর জানাজায় শরিক হয়েছিলেন তারা সবাই শাহ আহমদ শফীকে হত্যাকাণ্ডের নিশান প্রত্যক্ষ করেছেন এবং শফীর পরিবার থেকে একাধিকবার বক্তব্য ও সাংবাদিক সম্মেলন করে বিচারের দাবি করা হয়েছে। একজন ভিকটিম হিসেবে হত্যার বিচার দাবি করা তার পরিবারের জন্য অপরাধ? সন্ত্রাসীরা শফীর পরিবার এবং মাওলানা আনাছ মাদানীকে আজও হত্যার হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকির ভয়ে তিনি সচরাচর চলাফেরা করতে পারছে না। আমরা এই পরিস্থিতির জন্য আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

যেকোনো অবস্থায় কওমিয়াতের ঐক্য ধরে রাখতে ও ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা না দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান আলেমরা।

বিবৃতিদাতারা হলেন, মুফতি ওসমান (ঢাকা), মুফতি নুরুল ইসলাম (ঢাকা), আব্দুল কাদের, মুফতি সাইফুল ইসলাম (ঢাকা), মুফতি খেফায়ত উল্লাহ (ঢাকা), মুস্তাফা কামাল (সিলেট), মুফতি সিরাজুল ইসলাম (চট্টগ্রাম), মুফতি নোমান কাসেমী (নোয়াখালী), মাহমুদুল হাসান জিহাদী (চট্টগ্রাম), রহিম উল্লাহ নোমানী (কুমিল্লা), আব্দুল হক (চাঁদপুর), আব্দুস সাত্তার জিহাদী (ঢাকা), মুজাহেরুল হক (জামালপুর), সাইফুদ্দিন কাসেমী (চট্টগ্রাম), আমিনুল ইসলাম (বাগেরহাট), নাছির উদ্দিন আফেন্দি (পাবনা), মুফতি আহমদ আলী (কুমিল্লা), হাফেজ জাবের আহমদ (নরসিংদী), মুফতি ফয়জুল করিম (সিলেটি), শহিদুল্লাহ (যশোর), ইয়াকুব আহমেদ (কক্সবাজার), মুবিনুল হক, এনামুল হক, সুলাইমান, সাদেক হোসাইন, ইকবাল হোসেন, সাকের হোসেন জালালী, নজরুল ইসলাম রহিমী, আব্দুল ওয়াহাব জাফরী নওগা, মুফতি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago