চাকিরপশার নদীর ৩০৬ একরের মধ্যে ১৬৫ একর দখল
কুড়িগ্রামে রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, উজানে জলাবদ্ধতা নিরসন, জেলে ও সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করণ, খনন, ইজারা বাতিল এবং সেতু বিহীন সড়কে সেতু স্থাপনের দাবিতে সমাবেশ করেছে চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি।
১৯৪০ সালের রেকর্ড অনুযায়ী চাকিরপশার নদীর মোট জায়গা ছিল ৩০৬ একর। কালের পরিক্রমায় নদীতে ভাটা পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দখলদাররা নদীর বিভিন্ন অংশে পাড় বেঁধে পুকুর, রাস্তা, ফসলি জমি বানিয়ে দখল করায় বর্তমানে নদীর মোট জমি রয়েছে মাত্র ১৪১ দশমিক ২৯ একর। ১৯৯৬ সাল থেকে এই জমি সরকারি ভাবে জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হচ্ছে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজারহাট রেল স্টেশনের সামনে চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক ড. তুহিন ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, তিস্তা বাঁচাও-নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী।
তিনি বলেন, ‘নদী খনন ও পুনরুদ্ধার করা না হলে রংপুর বিভাগ আগামী ২০ বছরের মধ্যে তলিয়ে যাবে। চাকিরপশার নদী যদি দখলমুক্ত করে সঠিকভাবে প্রবাহ নিশ্চিত করা না যায় তাহলে রাজারহাট তলিয়ে যাবে।’
চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আরিফের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, তিস্তা বাঁচাও-নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান শফি, গণকমিটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ, চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব তারেক আহমেদ প্রমুখ।
নাহিদ হাসান বলেন, ‘দখলদাররা বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করে আন্দোলন থামিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমরা মনে করি, এই আন্দোলনকে ব্যাহত করার সাহস বা সুযোগ কারো নাই। জনগণের কোনো আন্দোলনকে কেউ আটকাতে পারে না।’
চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘চাকিরপশার নদীর এক ইঞ্চিও কারো দখলও থাকবে না, কোনো অমৎস্যজীবি নদীতে লিজ নিতে পারবে না। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনা না মানলে আইন লঙ্ঘন করা হবে। অনতিবিলম্বে এই নদীর সব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে।’
চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আরিফ দাবি করে বলেন, ‘সরকারিভাবে দখলদারের একটি তালিকায় ২২ জনের নাম থাকলেও প্রকৃত দখলদারের সংখ্যা অনেক বেশি।’
সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯-এর ২(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো সমিতিতে যদি এমন কোনো সদস্য থাকেন যিনি প্রকৃত মৎস্যজীবী নয়, তবে সে সমিতি কোনো সরকারি জলমহাল বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য হবে না।’ তবে, চাকিরপশার নদীতে এই আইন লঙ্ঘন করে অমৎস্যজীবিদের নামে লিজ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ২১ ধারা অনুযায়ী, ‘বন্দোবস্তকৃত/ইজারাকৃত জলমহালের কোথাও প্রবাহমান প্রাকৃতিক পানি আটকে রাখা যাবে না।’ কিন্তু, চাকিরপশার নদীতে এই আইন অমান্য করে উজান ও ভাটিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
গত দুবছর ধরে নদীটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি। বিভিন্ন সময় তারা নদী সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি, সভা-সমাবেশ এবং জন সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নানান কর্মসূচী পালন করে আসছে।
Comments