১০ মাসেও করোনা চিকিৎসায় অগ্রগতি নেই পাবনায়

​করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে সারাদেশের মতো পাবনাতেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে, দ্বিতীয় দফায় এখনো করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার ১০ মাসে পেরিয়ে গেলেও পাবনায় করোনা চিকিৎসার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: স্টার

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে সারাদেশের মতো পাবনাতেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে, দ্বিতীয় দফায় এখনো করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার ১০ মাসে পেরিয়ে গেলেও পাবনায় করোনা চিকিৎসার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

দেশের বিভিন্ন জেলা গত ১০ মাসে করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে গেলেও আগের অবস্থাই রয়ে গেছে পাবনাতে।

জনসচেতনতার অভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পাবনায় করোনার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।

এখনো জেলায় কোনো আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব না হওয়ায় পাবনার সম্ভাব্য করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠাতে হয় অন্য জেলায়। পাবনায় নমুনা পরীক্ষার সুযোগ না থাকায়, পরীক্ষার পরিমাণও অনেক কম। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শুধুমাত্র সন্দেহজনক রোগীদের নমুনাই পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. কে এম আবু জাফর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাবনায় আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করার জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১০ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। বার বার চেষ্টা করার পরও এখানে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ল্যাব সুবিধা না থাকায় পাবনার রোগীদের নমুনা নিয়ে পাশের জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মাধ্যমে পাবনায় দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও তা স্থাপন করা হয়নি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, পাবনার সিভিল সার্জন জানান ল্যাব স্থাপনের জন্য বাজেট পাঠানো হলেও তারা আর কোনো উদ্যোগ নেননি।

স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগের অভাব না থাকলেও পাবনার সুধী মহল ও রাজনৈতিক মহলের উদ্যোগের অভাবে ল্যাব স্থাপনের কাজ এখনও ফাইলবন্দি রয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।

পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা না হলেও পাবনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জিনএক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে কিছু নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মার্চ মাসে দেশে করোনা আঘাত হানলেও পাবনায় প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায় ১৬ এপ্রিল। পাবনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় ২৩ হাজার ৬৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৪৪ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১০ জন।

মাসিক তালিকা থেকে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও নভেম্বর থেকে আবার বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা।

রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পাবনায় করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো উন্নতি হয়নি। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় শুরু থেকেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিট সেবা দিয়ে আসছে। তবে ১০০ শয্যার এ ইউনিটে এ পর্যন্ত মাত্র ১৩৮ জন সন্দেহভাজন রোগী ভর্তি করা হয়। যার মধ্যে মাত্র ৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ রোগী হাসপাতালমুখি হচ্ছেন না বলে জানা যায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র সাধারণ এবং ঝুঁকি মুক্ত রোগীরা এখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন।

হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সালেহ মোহাম্মাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রোগ নির্ণয়ের সুযোগ না থাকায় এবং উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় শুধুমাত্র রোগীদের বর্ণনা শুনে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে।’

করোনা রোগীদের জন্য হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। কেননা, যেকোনো সময় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোগীদের হাইফ্লো অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এবং আইসিইউ প্রয়োজন হয়। কিন্তু পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় আইসিইউ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ইতোমধ্যে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের জন্য হাইফ্লো ক্যানলা সরবরাহ করা হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় এগুলো কোনো কাজে আসছে না এবং ক্যানলাগুলো হাসপাতালের স্টোর রুমে পড়ে রয়েছে বলে জানান ডা. সালেহ মোহাম্মাদ।

সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর বলেন, ‘সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগির পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা যাবে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে হাসপাতালের আইসিইউ চালু করা সম্ভব হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোগীরাও চিকিৎসা পাবেন।’

পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা কোভিড ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি কবির মাহামুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করা হলেও অনেকই তার তোয়াক্কা করছেন না। মোবাইল কোর্ট করে কিছু মানুষকে সাজার আওতায় আনা হলেও জনগণের সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন দিয়ে এ মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago