শীর্ষ খবর

যিনি তৈরি করেন ভেড়ার লোমের কম্বল

সারাদেশে মাত্র একজনই ভেড়ার লোম দিয়ে কম্বল তৈরি করেন। ভেড়ার গা থেকে লোম কেটে সেই লোমে চরকায় সুতা তৈরি করেন। সুতা থেকে হস্তচালিত তাঁতে বুনেন কম্বল। প্রতিটি কম্বল বিক্রি হয় আড়াই থেকে চার হাজার টাকায়।
ছবি: স্টার

সারাদেশে মাত্র একজনই ভেড়ার লোম দিয়ে কম্বল তৈরি করেন। ভেড়ার গা থেকে লোম কেটে সেই লোমে চরকায় সুতা তৈরি করেন। সুতা থেকে হস্তচালিত তাঁতে বুনেন কম্বল। প্রতিটি কম্বল বিক্রি হয় আড়াই থেকে চার হাজার টাকায়।

কম্বল বুনতে বুনতেই কথা বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলা মহল্লার আব্দুল খালেক। তিনি জানান, এটা তার পৈত্রিক ব্যবসা। দাদা ফজলুর রহমান ভারতের বিহার থেকে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থায়ী হয়েছিলেন। তিনিই পরিবারের অন্যদের ভেড়ার লোমের কম্বল তৈরি করতে শিখিয়েছিলেন। এক সময় খালেকের বাবা একরামুল হকসহ আত্মীয়-স্বজন মিলিয়ে ২৫টি পরিবার এ পেশায় যুক্ত ছিল। সময়ের সঙ্গে সবাই অন্য পেশায় চলে গেলেও ৬৩ বছর বয়সী খালেক এখনো ভেড়ার লোমের কম্বল তৈরি করছেন।

কম্বল তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে খালেক জানান, জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি ভেড়ার লোম সংগ্রহ করেন। বিশেষ ধরনের কাঁচি দিয়ে ভেড়ার শরীর থেকে লোম কাটেন। প্রতিটি ভেড়ার লোম কাটতে নেন ৫০ টকা। সঙ্গে বিনামূল্যে পান লোম। একটা ভেড়া থেকে বছরে দুইবার লোম সংগ্রহ করা যায়।

সরা বছরই ভেড়ার লোম সংগ্রহ করেন খালেক। প্রক্রিয়াজাতের পর লোম দিয়ে চরকায় সূতা কাটেন। সূতা দিয়ে তাঁতে বুনেন কম্বল। বিভিন্ন রংয়ের সুতা দিয়ে কম্বলে নকশা ফুটিয়ে তোলেন। একসময় হাটে হাটে কম্বল বিক্রি করলেও এখন রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত দোকানে যায় তার কম্বল। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় তার পরিচিত ক্রেতা আছেন।

খালেক জানান, ভালো উপার্জন হলেও কম্বল তৈরিতে খাটুনি বেশি। তাই সবাই এই কাজ ছেড়ে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। তার নিজের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে দুটো অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এখন তিনি একাই এ পেশায় আছেন।

১০ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে কম্বল তৈরিতে যুক্ত হন খালেক। কিন্তু এখন আর কেউ এই কাজ করতে চায় না। আক্ষেপ করে তিনি বলছিলেন, যদি একজন এই কাজটা তার কাছ থেকে শিখে নিত তাহলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতো।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় ৫ হাজার ৭২৭টির বেশি ভেড়া আছে। ভেড়ার লোমের কম্বল পরিবেশ বান্ধব। আব্দুল খালেক ছাড়া দেশে আর কেউ এই কম্বল তৈরি করেন না। তিনি এখনও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। নতুন কেউ না আসলে এই শিল্প হারিয়ে যাবে। আমরা এর প্রসারের চেষ্টা করছি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Public Administration Ministry's Logo

2 deputy commissioners among 3 transferred ahead of polls

The Ministry of Public Administration today announced transfers of at least three government officials, including two deputy commissioners, ahead of the upcoming national parliamentary election

28m ago