২০২০ সালে চীনের ৩ ‘বড় ভুল’

ফাইল ফটো রয়টার্স

চীনের উহানে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সাল জুড়েই করোনায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। তবে নানা বিপর্যয়ের মধ্যেও চলতি বছরে চীনের সাফল্যও কম নয়।

বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনকে বৈশ্বিক করোনা মহামারির কেন্দ্রভূমি বলা হলেও সে দেশের নেতারা তা দমনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মহামারি শুরুর পর এক বছরের মধ্যেই চীনে জনজীবন যখন অনেকটাই স্বাভাবিক তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।

মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও চীনের অর্থনীতি রয়েছে শক্তিশালী অবস্থায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পরও সারাবিশ্ব থেকে বিনিয়োগ আসছে মহাপ্রাচীরের দেশটিতে।

এতসব সাফল্যের পরও চীনের তিনটি ‘বড় ভুল’ রয়েছে ব্লুমবার্গ বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে।

ছোট ব্যবসায়ীদের অবজ্ঞা

করোনার বিস্তার রোধে চীনের বিভিন্ন শহরে লকডাউন ঘোষণা করায় সেখানকার বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা বাসায় বসে কাজ করতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে যায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে, ঘরে বসে অ্যাপের মাধ্যমে খাবার কেনায় ছোট ছোট খাবারের দোকান ও ক্যাটারিং সার্ভিসের কর্মীরা পড়ে যান অস্তিত্ব সংকটে। চীনে এ খাতে কর্মী ছিল তিন কোটি ৩০ লাখের বেশি।

গত অক্টোবর পর্যন্ত তাদের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে। অথচ, গত এপ্রিল থেকে ছোট হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করে আসছিলেন।

এছাড়াও, ব্লুমবার্গ প্রতিবেদন মতে, চীনের শহরগুলোতে নির্মাণ, উৎপাদন ও সেবা খাতে কাজ করেন প্রায় ১৭ কোটি অভিবাসী শ্রমিক। করোনায় তারা কাজ হারানোর পর বেকারভাতাও সংগ্রহ করতে পারেননি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীন সরকারের দৃষ্টিতে এসব শ্রমিক কর্মহীন নন। তারা প্রায়শই গ্রামে গিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন।

জ্যাক মাকে ‘শাস্তি’

সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার নীতি চীনে নতুন কিছু নয়। তবে দেশটির সরকার আলিবাবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মার মুখ বন্ধ করে অন্য বিলিয়নারদের শিক্ষা দেওয়ার নীতি নিয়েছেন বলে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত ৩ নভেম্বর আমেরিকানরা যখন তাদের নতুন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করতে ভোট দিচ্ছেন সেই দিন চীন সরকার জ্যাক মার অ্যান্ট গ্রুপ কোম্পানির ৩৫ বিলিয়ন ডলার আটকে দেয়।

চীন সরকারে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়মকানুন বদলানো হয়েছে এবং অ্যান্ট গ্রুপ স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত হওয়ার সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

অনেকের মত, এর মূল কারণ হচ্ছে— ঘটনাটির সপ্তাহ দুয়েক আগে জ্যাক মা সাংহাইয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘ভীষণ ক্ষিপ্ত’ করেছিল। জ্যাক মা তার বক্তব্যে চীনের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন।

কেউ হয়তো বলতে পারেন জ্যাক মা মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এমনটি বলেছিলেন। তা যদি সত্যিও হয়, জ্যাক মা যা বলেছিলেন তা মিথ্যা ছিল না। চীনের সরকারি কর্মকর্তারাও দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমালোচনা করে থাকেন জ্যাক মার মতো একই শব্দ ব্যবহার করে। কিন্তু, জ্যাক মা তা বলায় নেমে এসেছে নতুন ‘শাস্তি’।

বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে চীনের বিলিয়নারদের সরকারের সমালোচনা থেকে দূরে থাকার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, গত অক্টোবরে চীনের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমালোচনা করে জিনপিংয়ের বিরাগভাজন হয়েছিলেন এভারগ্রান্ডে গ্রুপের চেয়ারম্যান হুই কা ইয়ান। সে সময় তাকে রক্ষা করেছিলেন শেনঝেনের প্রাদেশিক সরকার। তবে, জ্যাক মাকে সেই একই কারণে খেসারত দিতে হয়েছে।

সরকারি খেলাপিদের প্রতি শিথিলতা

চীনে দুই ধরনের আর্থিক ব্যবস্থা রয়েছে তা সবাই জানেন। দেশটির বেসরকারি ব্যবসায়ীরা কোনো আর্থিক অব্যবস্থাপনার আশ্রয় নিলে তাদেরকে তলব করা হয়। কিন্তু, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর অনিয়মের প্রতি নীরব থাকে চীন সরকার।

করোনার পর চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও যেসব রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলে ব্লুমবার্গ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ তালিকায় রয়েছে একটি বৃহৎ অটোমোবাইল কোম্পানি, একটি কয়লা খনি সংস্থা ও একটি চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। সংস্থাগুলোর কাছে যথেষ্ট পরিমাণে সম্পদ থাকার পরও তারা পেমেন্টের বিষয়ে সরকারি নীতি অনুসরণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সব সময়েই চীনের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার কথা বললেও দেশটিতে চলমান দুই অর্থনৈতিক ধারার মধ্যে সামঞ্জস্য আনা খুবই জরুরি বলে প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

9h ago