শোবিজ অঙ্গনের যাদের হারিয়েছি

বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা মহামারির প্রভাব। তাই ২০২০ ছিল সবকিছু মিলিয়ে বিষাদের। শোবিজ অঙ্গনের অনেককেই হারাতে হয়েছে এ বছর। কিন্তু, তারা হারিয়ে গেলেও থেকে গেছে তাদের সৃষ্টি। দুই বাংলার তেমন কিছু গুণীজনকে নিয়ে এই আয়োজন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আলী যাকের, আলাউদ্দীন আলী, এন্ড্রু কিশোর (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা মহামারির প্রভাব। তাই ২০২০ ছিল সবকিছু মিলিয়ে বিষাদের। শোবিজ অঙ্গনের অনেককেই হারাতে হয়েছে এ বছর। কিন্তু, তারা হারিয়ে গেলেও থেকে গেছে তাদের সৃষ্টি। দুই বাংলার তেমন কিছু গুণীজনকে নিয়ে এই আয়োজন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের কাছে প্রিয় এক নাম। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন কবি ও আবৃত্তিকার। ছয় দশকের দীর্ঘ অভিনয় জীবন ছিল তার। বিশেষ প্রিয়ভাজন ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর, কিন্তু মনে-প্রাণে ছিলেন তরুণ। করোনার লডকাউনে শেষ করেন নিজের বায়োপিক। কিন্তু, হঠাৎ করোনায় আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হোন। ৪০ দিনের লড়াই শেষে কলকাতার একটি হাসপাতালে ১৫ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি।

আলী যাকের

২৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন স্বনামখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী যাকের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের চার বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে জনপ্রিয় নাম।  ‘বহুব্রীহি’, ‘আজ রবিবার’সহ অনেক নাটকে তার অভিনয় দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে আছে।  শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে পান। এছাড়াও, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

এন্ড্রু কিশোর

দীর্ঘ দিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর বিদায়ী বছরের ৬ জুলাই রাজশাহীতে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’।

আলাউদ্দীন আলী

বরেণ্য সংগীতব্যক্তিত্ব আলাউদ্দীন আলী গত ৯ আগস্ট মারা গেছেন। একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার ছিলেন তিনি। তার সুরারোপিত গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়’, ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ’, ‘এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’।

কে এস ফিরোজ, মোস্তফা কামাল সৈয়দ, আবদুল কাদের, আজাদ রহমান (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

আবদুল কাদের

অভিনেতা আবদুল কাদের ২৬ ডিসেম্বর মারা গেছেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকে ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি। জনপ্রিয় এই অভিনেতা একইসঙ্গে টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক— মাটির কোলে; নক্ষত্রের রাত; শীর্ষবিন্দু; সবুজ সাথী; তিন টেক্কা; যুবরাজ; আগুন লাগা সন্ধ্যা; প্যাকেজ সংবাদ; সবুজ ছায়া; কুসুম কুসুম ভালোবাসা; নীতু তোমাকে ভালোবাসি; আমাদের ছোট নদী। ‘রং নাম্বার’ নামের একটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি

কে এস ফিরোজ

৯ সেপ্টেম্বর  করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও সিনেমার অভিনেতা কে এস ফিরোজ । ১৯৬৮ সালে প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন তিনি। প্রথম অভিনীত টিভি নাটকের নাম ‘তবুও দ্বীপ জ্বলে’। অভিনয় জীবনে পাঁচ শতাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেতা।

আজাদ রহমান

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী আজাদ রহমান ১৬ মে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো-  ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’।

মোস্তফা কামাল সৈয়দ

বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ গত ১ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ

বাংলাদেশ টেলিভিশনের অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকের নির্মাতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ। ৩ আগস্ট রাজধানীর গ্রীনলাইফ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিটিভির জনপ্রিয় নাটকের সঙ্গে জাড়িয়ে আছে তার নাম। তার নির্মিত জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে আছে ‘সকাল-সন্ধ্যা’, ‘ঢাকায় থাকি’, ‘কোথাও কেউ নেই’।

সাদেক বাচ্চু

১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় খল অভিনেতা এবং মঞ্চ ও টেলিভিশনের পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের গুণী অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

আরও যাদের হারিয়েছি

নাট্যকার মান্নান হীরা ২৩ ডিসেম্বর মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু ৩ নভেম্বর মারা যান। সুরকার সেলিম আশরাফ মারা যান ২ মার্চ। চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী চিত্র সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মিন্টু ১৮ ডিসেম্বর মারা যান। দেশের শীর্ষস্থানীয় সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতার কর্ণধার সেলিম খান করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০ ডিসেম্বর। ইত্যাদিখ্যাত অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার ১৪ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Messi announces Inter Miami move

Lionel Messi will sign for Major League Soccer side Inter Miami, the player said Wednesday in interviews with Spanish media, choosing the United States as his next destination over a Barcelona reunion or blockbuster deal to play in Saudi Arabia.

4h ago