ক্রীড়াঙ্গনের ২০২০: অর্জনের চেয়ে হারানোর বেদনার পাল্লা ভারী

পৃথিবী সূর্যের চারদিকে আরও একবার ঘুরে গেছে। আরেকটি ক্যালেন্ডারের শেষ পৃষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়েছে। ঠিক তেমন করে জীবনের প্রয়োজনও ফুরোয় মানুষের। প্রকৃতির নিয়মে চলে যেতেই হয়। সমাপ্তিই সত্য। প্রতি বছর শেষেই থাকে তাই হারানোর একটা দীর্ঘ বেদনার তালিকা। তবে মহামারির হানায়  ‘মৃত্যু’ শব্দটা যে ২০২০ সালকে করেছে আরও বিষাক্ত! কঠিন বাস্তবতা বছরের বেশিরভাগ সময়ে আনন্দময় মাধ্যম- খেলাধুলা হয়ে ছিল স্থবির। বছরটা যে কতটা বিষণ্ণতায় ঘেরা, তা বোঝাতেই যেন বছরজুড়ে মৃত্যু মিছিল দেখল বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গন! আর কিংবদন্তিদের প্রস্থান বাড়িয়ে দিয়ে গেল বেদনার ভারও।

দিয়েগো ম্যারাডোনা

maradona 1986
ছবি: এএফপি

এবছর ক্রীড়াবিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়ার খবরটি এসেছিল গত ২৫ নভেম্বর। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ও ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণময় চরিত্র দিয়েগো ম্যারাডোনার মহাপ্রয়াণ হয় সেদিন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে জীবনাবসান হয় পায়ের জাদুতে রোমাঞ্চ ছড়ানো এই তারকার। তার আগে বেশ কয়েকদিন ধরেই নানান অসুস্থতায় ভুগছিলেন ফুটবল ঈশ্বর খ্যাত তারকা।

১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। এরপর ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিকে ইউরোপের পরাশক্তিতে পরিণত করেছিলেন। ১৯৯০ বিশ্বকাপেও দলকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। তবে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ডোপ কেলেঙ্কারিতে মাঝপথে নিষিদ্ধ হতে হয় তাকে। খেলা ছাড়ার পর মাদকাসক্তিসহ নানা কারণে বারবার খবরে আসেন তিনি। ২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচের ভূমিকায়ও ছিলেন মানুষকে মোহাবিষ্ট করে রাখা এই কিংবদন্তি।

পাওলো রসি

rossi
ছবি: সংগৃহীত

গত ১০ ডিসেম্বর খ্যাতিমান ক্রীড়া তারকাদের মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয় পাওলো রসির নাম। ৬৪ বছর বয়সেই বিদায় নেন ১৯৮২ বিশ্বকাপজয়ী ইতালিয়ান তারকা। ওই আসরে গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট দুটোই জিতেছিলেন রসি। সর্বকালের সেরা ফরোয়ার্ডের একজন একই বছর জিতে নেন ব্যালন ডি’রও।

ডিন জোন্স

Dean Jones
ফাইল ছবি: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

ডিন জোন্সের মৃত্যুটা অকস্মাৎ। চলে যাওয়ার বয়স ছিল না তার। আইপিএলের ধারাভাষ্য দিতে মুম্বাইয়ের একটি সাত তারকা হোটেলে ছিলেন জোন্স। গত ২৪ সেপ্টেম্বর হোটেল কক্ষেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসীমের পথে পাড়ি দিয়ে স্তব্ধ করে দেন ক্রিকেট দুনিয়া। অ্যালান বোর্ডারের দাপুটে অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন জোন্স। সেই নব্বইয়ের দশকে ব্যাটিংয়ে তিনি এনেছিলেন আগ্রাসী ঘরানা।

স্যার এভারটন উইকস

sir everton
ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চাশের দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার ক্লাইভ ওয়ালকট ও স্যার ফ্র্যাঙ্ক ওরেলের সঙ্গে বিখ্যাত ‘থ্রি ডাব্লিউ’র আরেকজন এভারটন উইকস। ক্রিকেট ইতিহাসের অমর এই চরিত্র মাঠে অনেক সেঞ্চুরি করলেও জীবনের ইনিংস থামেন নার্ভাস নাইনটিজে। গত ২ জুলাই বার্বাডোজে নিজ বাড়িতে ৯৫ বছর বয়েসে জীবনপ্রদীপ নিভে যায় তার। ক্রিকেট মাঠের দুই সঙ্গী ওয়ালকট আর ওরেলের কবরের পাশেই সমাধিস্থ করা হয় তাকে।

বাদল রায়

badal roy
ছবি: খন্দকার তারেক

গত ২২ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান আশির দশকের মাঠ মাতানো বাংলাদেশের সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়। তিনি লিভার ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। ক্লাব পর্যায়ে দুই দশকেরও বেশি সময় তিনি খেলেছেন ঢাকা মোহামেডানের হয়ে। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর ফুটবল সংগঠক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন বাদল। প্রিয় ক্লাব মোহামেডানের কর্মকর্তা ছিলেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি পদেও আসীন ছিলেন তিনি।

রামচাঁদ গোয়ালা

ram_chand_goala
ছবি: সংগৃহীত

স্বীকৃত আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি তার। তবে দেশের হয়ে দুর্দান্ত খেলেছিলেন রামচাঁদ গোয়ালা। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনের অগ্রপথিক ধরা হয় তাকে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন নিয়মিত মুখ। জাতীয় দলে খেলছেন ৪৩ বছর বয়সেও। তার সময়ে খেলা ক্রিকেটাররা একবাক্যে স্বীকার করেন, মোহাবিষ্ট স্পিন জাদুতে মাত করে রাখার সামর্থ্য ছিল ময়মনসিংহের রামচাঁদের। গুণী এই মানুষ ২০২০ সালের ১৯ জুন পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

কোবি ব্রায়ান্ট

NBA legend Kobe Bryant
ছবি: এএফপি ফাইল

বছরের শুরুতে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল খেলোয়াড় কোবি ব্রায়ান্ট হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। মাত্র ৪১ বছর বয়সে। এই কিংবদন্তি লস অ্যাঞ্জেলস লেকারসের হয়ে দুই দশক কোর্ট কাঁপান। পাঁচবার জেতেন এনবিএ চ্যাম্পিয়নশিপ। তার ১৩ বছর বয়সী কন্যা জিয়ানা একই দুর্ঘটনায় মারা যায়।

পিকে ব্যানার্জি

pk banerjee
ছবি: টুইটার

ভারতীয় ফুটবল কিংবদন্তি পিকে (প্রদিপ কুমার) ব্যানার্জি বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গত ২০ মার্চ। ফুটবলের জন্য গোটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই সাবেক তারকা। ৮৩ বছর বেঁচে থাকা এই ফুটবলার দীর্ঘ ৫১ বছর ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন পিকে। খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতির চূড়া ছোঁয়ার পর কোচ হিসেবেও নাম কুড়িয়েছিলেন তিনি।

চুনী গোস্বামী 

chuni
ছবি: বিসিসিআই টুইটার

পিকের মৃত্যুর মাত্র ৪০ দিনের মাথায় ভারতীয় উপমহাদেশকে শোকে স্তব্ধ করে বিদায় নেন চুনী গোস্বামী। গত ১ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন তিনি। অর্জুন পুরস্কার ও পদ্মশ্রী জেতা চুনী ক্যারিয়ারের গোটা সময়টাই কাটান মোহনবাগানের হয়ে। ক্রিকেটার হিসেবেও প্রতিভাবান ছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছেন ১৯৬২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত।

গোলাম রব্বানী হেলাল

helal
ছবি: সংগৃহীত

ব্রেইন-স্ট্রোক করার পর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে আর পেরে ওঠেননি গোলাম রব্বানী হেলাল। গত ৩০ মে ৬৭ বছর বয়সে চিরতরে বিদায় নেন আশির দশকে আবাহনীর জার্সিতে মাঠ মাতানো বাংলাদেশের সাবেক এই ফুটবলার।

এএসএম ফারুক

asm faruque
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে খেলতে এসেছিল কোনো বিদেশি দল। এমসিসির ওই সফরে নর্থ জোন, ইস্ট জোন, সাউথ জোন ও বাংলাদেশ নামের চারটি দল খেলেছিল। সবগুলোতেই ছিলেন এএসএম ফারুক। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশের সাবেক এই জাতীয় ক্রিকেটার ও ম্যানেজার।

নওশেরুজ্জামান

naosheruzzaman
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন একেএম নওশেরুজ্জামান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর ৭২ বয়সে পরলোকগমন করেন তিনি।

আলেহান্দ্রো সাবেয়া

sabella
ছবি: টুইটার

আর্জেন্টিনাকে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে তোলা কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়াকে ফুটবলপ্রেমীরা হারায় গত ৮ ডিসেম্বর। ৬৬ বছর বয়সী সাবেক এই ফুটবলারের প্রাণ কেড়ে নেয় ক্যান্সার।

চেতন চৌহান

chetan
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের হয়ে সত্তর-আশির দশকে ৪০ টেস্ট ও ৭ ওয়ানডে খেলেছিলেন চেতন চৌহান। গত ১৫ অগাস্ট করোনাভাইরাস কেড়ে নেয় ৭৩ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটারের প্রাণ।

বছরের শেষ প্রান্তেও হারানোর মিছিল

২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের দিনই পাওয়া যায় দুই দুঃসংবাদ। ৭৫ বছরে চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ও ধারাভাষ্যকার রবিন জ্যাকমান। আর ৮৩ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় বলেন ইংল্যান্ডের খ্যাতিমান ব্যাটসম্যান জন এডরিচ।

বছরের একদম শেষ দিকে চলে যান নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান জন রিড। গত ২৯ ডিসেম্বর আশির দশকের এই ব্যাটসম্যানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।

Comments

The Daily Star  | English

One-stop crisis centre: Conviction in less than 2pc cases

The one-stop crisis centres are supposed to provide comprehensive support to women and children victims of violence, offering healthcare, police assistance, legal aid and other services.

8h ago