বেনাপোল বন্দরে ১২০টি পরিবারের মানবেতর জীবন

গ্রামের দুপাশ দিয়ে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করায় বেনাপোল বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালের পশ্চিম পার্শ্বে বসবাসরত ১২০টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভিযোগ আছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় তাদের এই দুর্দশা।
প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে চলাচল করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। ছবি: স্টার

গ্রামের দুপাশ দিয়ে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করায় বেনাপোল বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালের পশ্চিম পার্শ্বে বসবাসরত ১২০টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভিযোগ আছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় তাদের এই দুর্দশা।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বরের আগে এই স্থানটি ছিল মানুষের বসবাসের ঘনবসতি এলাকা। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরকে সু-রক্ষিত রাখতে গ্রামের দুপাশ দিয়ে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করে। ফলে, একপ্রকার আটকা পড়ে যায় গ্রামের শতশত পরিবার। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে ছেলে চলে যান অন্যত্র। শুধু থেকে যায় এই ১২০টি অসহায় পরিবার।

পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের বাঁধার মুখেও নিজেরা বন্দিদশা থেকে বাঁচতে নির্মিত প্রাচীরের কিছু জায়গা ভেঙে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে। কিন্তু, রোগী ও স্কুলগামী শিশুদের ভোগান্তি শেষ হয়নি।

রাত হলেই শুরু হয় ভারত থেকে আমদানিকৃত লোহা ও এ জাতীয় পণ্যের আনলোডের বিকট শব্দ। শব্দের কম্পন ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকাতে। বর্ষার সময় এসিড মিশ্রিত পানি প্রবেশ করে তাদের বাড়িঘরে।

এসবের সমাধান চেয়ে এলাকাবাসী অনেকবার বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে আবেদন করলেও এখনো কোনো সমাধান হয়নি। এ ছাড়া, প্রাচীর সরিয়ে রাস্তা করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধানের সুপারিশ করলেও তার কোনো সমাধান পাওয়া

যায়নি। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তাও জানেন না তারা।

ওই এলাকার বাসিন্দা বদরউদ্দিন জানান, 'আমাদের অধিকাংশের বাড়িঘরের দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। শব্দ দূষণ, এসিড ও কেমিকেল জাতীয় পণ্যের কারণে অধিকাংশ মানুষ অসুস্থ হয়ে পেড়েছে। অনেকেই নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগী ইসরাইল সরদার জানান, এলাকার কোনো বাড়িতে এখন আর ভাড়াটিয়ারা থাকতে চায় না। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। জনস্বার্থে জরুরিভিত্তিতে বন্দরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এই এলাকাটি অধিগ্রহণ করলে সব সমস্যার সমাধান হবে।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহম্মদ ইউসুফ আলী জানান, বন্দরে ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালের পার্শ্ববতী এলাকায় বসবাসরত মানুষেরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। এভাবে শব্দ দূষন ও কম্পন চলতে থাকলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বে।

যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, ওই এলাকায় পরিবেশ ও শব্দ দূষণ হচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত টিম কাজ শুরু করেছে।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, 'এলাকাবাসীর সমস্যা ও অভিযোগ আমরা ইতোমধ্যে আবেদনের মাধ্যমে পেয়েছি। বিষয়টি বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং সমাধানের চেষ্টা চলছে।'

এলাকাবাসী তাদের এমন মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি পেতে প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda returns home after 6 days in hospital

Thousands of party activists, along with senior BNP leaders, are escorting Khaleda's convoy back to her Gulshan residence

29m ago