তাদের বিষমুক্ত সবজি
ঘরের পাশেই মাচায় লাউ, শিম। আঙিনায় লাল শাক, পালং শাকসহ নানা সবজির আবাদ। ঘর-সংসার সামলে কাজের ফাঁকে আঙিনার খেতে সময় দেন ব্রহ্মপুত্র চরের গৃহবধূরা। ঘরের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করেন তারা।
খুব বেশি দাম না পেলেও হাতে একটু বাড়তি টাকা থাকে, এই। তাদের সবচেয়ে যেটি আনন্দ দেয় সেটি হলো, এসব সবজি চাষে দেওয়া হয় না কোনো কীটনাশক। কেবল বাড়িতে তৈরি জৈব সার ব্যবহার করা হয়।
‘নিজের পরিবারের জন্য ফলাই, তাই কোনো শাক সবজিতে রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ওষুধ দিই না,’ হেসে দ্য ডেইলি স্টারকে বলছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর বিসারপাড়ার গৃহবধূ সখিনা বেগম (২৮)।
তিনি জানালেন, সরকারি কর্মকর্তা আর বিভিন্ন এনজিওর লোকজন চরে এলে তাদের কাছ থেকেই শাক-সবজি কেনেন। রাসায়নিক সার না থাকায় সবজির আলাদা স্বাদের কথা বলেন তারা।
একই চরের গৃহবধূ মরিয়ম বেগম (৩৪) ডেইলি স্টারকে বললেন, ‘বাড়ির আশেপাশে লাউ, শিম, পটল, ঢেঁড়শ, পেঁপে, লালশাক, পালংশাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ফলাই। সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। হাতে বাড়তি কয়েকটা টাকা আসে।’
ব্রহ্মপুত্র নদের চর কোদালকাটি এলাকার গৃহবধু আফরোজা বেগম (৪০) ডেইলি স্টারকে বললেন, ‘শুধু বর্ষাকাল বাদ দিয়ে সারা বছরই কোনো না কোনো শাক-সবজি চাষ করা হয়। এসব শাক-সবজিই আমাদের প্রধান তরি-তরকারি।’
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গয়ছূল আলম মন্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেক সময় স্থানীয় বাজারে এসব সবজি কেনার লোক পাওয়া যায় না। সবার বাড়িতেই চাষ হয়। তবে অনেকে এসব শাক-সবজি চর থেকে কিনে নিয়ে গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি করেন।’
জেলার নয়টি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলে কয়েক হাজার বসতবাড়িতে বিষমুক্ত শাক-সবজি চাষ করছে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক শামসুদ্দিন মিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি সবজি বিক্রি করা হয়। দুগর্ম চর থেকে মূল ভূখণ্ডে আসা অনেকটা কষ্টের হওয়ায় চরের লোকজন তাদের চাষ করা সবজি চরের বাজারেই কম দামে বিক্রি করে দেন।’
Comments