কৃষক বিদ্রোহ: প্রজাতন্ত্র দিবসে ‘ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লিতে ঢুকবো’

দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশটির শক্তিমত্তা দেখাতে দিল্লিতে বিশাল কুজকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। এ বছরও থাকছে তেমন আয়োজন। তবে, দাবি মানা না হলে সেদিন নতুন কৃষি আইনবিরোধী কৃষকরা ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লিতে প্রবেশ করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।

সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতারা গতকাল শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসে তারা দিল্লিতে প্রতিবাদী র‌্যালির আয়োজন করবেন।

কৃষাণ ক্রান্তিকারি ইউনিয়নের পাঞ্জাব শাখার সভাপতি দর্শন পাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যদি আগামী ৪ জানুযারির মধ্যে সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে আমরা ৬ জানুয়ারি কুন্দলি-মনেসর-পালওয়াল এক্সপ্রেস ওয়েতে ট্রাক্টর র‌্যালির আয়োজন করবো। তা হবে প্রজাতন্ত্র দিবসে আমাদের প্রতিবাদী র‌্যালির রিহার্সেল।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দিল্লির সীমানায় অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী কৃষকরা আগামী সোমবার সরকারের সঙ্গে পরবর্তী ধাপের বৈঠকের আগে এই হুমকি দিয়েছেন।

Delhi Press Conference
নয়াদিল্লিতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতারা জানিয়েছেন তারা আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে প্রতিবাদী র্যা লির আয়োজন করবেন। ২ জানুয়ারি ২০২০। ছবি: সংগৃহীত

‘আমরা দিল্লিতে ঢুকবো’

কৃষকনেতা দর্শন পাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সরকারকে নীতিগতভাবে তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে হবে এবং ফসলের সর্বনিম্ন দামের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে। তা যদি না করা হয় তাহলে আগামী ২৬ জানুয়ারি আমরা ট্রাক্টর নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দিল্লিতে ঢুকবো। সেটা হবে কৃষকদের নিজস্ব কুজকাওয়াজ।’

একইভাবে অন্যান্য রাজ্যের রাজধানী ও জেলা শহরগুলোতে কৃষকদের প্রতিবাদী প্যারেড আয়োজন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

দ্য হিন্দু’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলমান আন্দোলনকে গতিশীল করতে আগামী ১৩ জানুয়ারি লহরি উৎসবের দিন কৃষাণ সংকল্প দিবস পালন করা হবে। সেদিন নতুন কৃষি আইনের কপিগুলো পোড়ানো হবে।

এছাড়াও, আগামী ১৮ জানুয়ারি মহিলা কৃষাণ দিবস ও আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে সব রাজ্যে রাজভবনের সামনে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হবে।

ভারতীয় কৃষাণ ইউনিয়নের একাংশের নেতা বলবীর সিং রাজেওয়াল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু, এই সরকারের ইগো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আমরা সব সময় সরকারকে বলেছি— হয় আইন তিনটি বাতিল করুন, নয়তো আমাদের সরাতে বল প্রয়োজন করুন।’

‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। আমরা কোনো সংঘাতে জড়াতে চাই না। সরকার যদি পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা সরকারের ইচ্ছা,’ যোগ করেন তিনি।

মূল লক্ষ্য সর্বনিম্ন দাম

নতুন কৃষি আইনের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বাড়বে বলে সরকার দাবি করলেও আন্দোলনকারী কৃষকরা বলছেন, নতুন আইন সরকারের সর্বনিম্ন দামে ফসল কেনার চলমান ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে। এর ফলে বড় কর্পোরেটগুলোর কাছে ক্ষুদ্র কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়বেন।

সরকার নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে হরিয়ানার কৃষকনেতা গুরমান সিং গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ফসলের সর্বনিম্ন দাম আইনে উল্লেখ করা এক বিষয় আর সর্বনিম্ন দামে ফসল কেনা অন্য বিষয়। যেমন, প্রতি কুইন্টাল ভুট্টার সর্বনিম্ন দাম ধরা রয়েছে ১,৮৫০ রুপি। কিন্তু, কৃষকরা তা বাজারে বিক্রি করছেন ৮০০ থেকে ১,১০০ রুপিতে।’

তার মতে, সরকার এভাবে কৃষকদের ঠকাচ্ছে। সরকার দাম বেঁধে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু, সরকারকে যখন বলা হচ্ছে সব কৃষকের সব ফসলি পণ্য সর্বনিম্ন দামে কিনতে হবে তখন তারা তা মেনে নিতে অস্বীকার করছে।

তিনি মনে করেন, ফসলের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়ার মাধ্যমে সরকার কৃষকদের ধোঁকা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন:

ভারতে কৃষক বিদ্রোহ

কৃষক বিদ্রোহ: দাবি পূরণ না হলে রেলপথেও বিক্ষোভ

কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে ট্রুডোর মন্তব্য, ভারত তলব করল কানাডার রাষ্ট্রদূতকে

কৃষক বিদ্রোহ: পাঞ্জাব-হরিয়ানার ক্রীড়াবিদদের ‘সমর্থন’ ও কৃষিবিজ্ঞানীর পুরস্কার প্রত্যাখ্যান

কৃষক বিদ্রোহ: সংকট নিরসনে কমিটি করবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

কৃষক বিদ্রোহ: দাবি না মানলে অনশনে যাবেন আন্না হাজারে

কৃষক বিদ্রোহ: কেজরিওয়াল গৃহবন্দি, স্বীকার করছে না দিল্লি পুলিশ

কৃষক বিদ্রোহ: ‘এমএসপির লিখিত আশ্বাস দিতে প্রস্তুত কেন্দ্র’

ভারতে কৃষক বিদ্রোহ: ‘আমরা খাবার এনেছি’ সরকারি খাবার ফিরিয়ে দিলেন

কৃষক বিদ্রোহ: দিল্লি বিধানসভায় বিতর্কিত ৩ কৃষি আইন প্রত্যাখ্যান

Comments

The Daily Star  | English

Interest payments, subsidies soak up almost half of budget

Interest payments and subsidies have absorbed nearly half of Bangladesh’s total budget expenditure in the first seven months of the current fiscal year, underscoring growing fiscal stress and raising concerns over public finances.

1h ago