‘মার্কিন নির্বাচন সমাপ্তি’র আহ্বান সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলেও পরাজয় মেনে নিতে এখনো রাজি নন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের ফল পাল্টানোর নানারকম চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। এর মধ্যেই ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ’ বলে এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
গতকাল রোববার ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক পাবলিক চিঠিতে তারা এমন মন্তব্য করেছেন বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
চিঠিতে তারা বলেছেন, ‘মার্কিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট পুনর্গণনা ও অডিট হয়েছে। আদালতে চ্যালেঞ্জও জানানো হয়েছে। গভর্নররা ফলাফল স্বীকৃতি দিয়েছে। ইলেকটোরাল কলেজ ভোট দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময়ও শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেকটারাল কলেজ ভোট গণনার সময় এসে গেছে।’
চিঠিতে সই করা ১০ সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী হলেন— ডিক চেনি, জেমস ম্যাতিস, মার্ক এসপার, লিওন পনেত্তা, ডোনাল্ড রামসফেল্ড, উইলিয়াম কোহেন, চাক হাগেল, রবার্ট গেটস, উইলিয়াম পেরি ও অ্যাশতোন কার্টার।
ট্রাম্প কর্তৃক কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনার জন্য আহ্বান জানানোর আগে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দেওয়া এই চিঠি বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে বেশ চাপে ফেলেছে বলেই সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চিঠিটিতে সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগকে নির্বাচনের ফল ও নতুন প্রশাসনের ক্ষমতা নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর যেকোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন।
চিঠিটি প্রকাশের পর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কোহেন সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ট্রাম্প দেশকে যে ‘অসাংবিধানিক পথে’ নিয়ে যাচ্ছিলেন, তার বিরুদ্ধে সতর্কতার পূর্বাভাস হিসেবেই আমাদের এই উদ্যোগ। এটি ছিল আমেরিকার জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান। আমরা বিশ্বাস করি যে, তারা সবাই স্বদেশপ্রেমী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে তারা এমন পথে যাচ্ছিলেন, যা অসাংবিধানিক। যেহেতু আমরা প্রতিরক্ষা বিভাগে দায়িত্বরত ছিলাম, তাই প্রতিরক্ষা বিভাগের সবার প্রতি অবশ্যই আমাদের একথা বলা উচিত যে, আপনারা এই দেশের সেবা করার জন্য শপথ নিয়েছেন। দেশের সংবিধানের প্রতি শপথ নিয়েছেন। কোনো ব্যক্তির দায়িত্ব পালনে নয়।’
সিএনএন’র তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত গণনায় জো বাইডেন ৩০৬টি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৩২টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো হোয়াইট হাউস ছাড়তে রাজি নন। পরাজয়ের পর থেকে ট্রাম্প নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতেই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এখন পর্যন্ত তার আইনি লড়াইয়ের প্রতিটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
আগামী ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনা হবে।
কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে কোনো সদস্য চাইলে কোনো রাজ্যের নির্বাচনী ভোটের ফল নিয়ে আপত্তি তুলতে পারবেন। যদি কোনো রাজ্যের একজন সিনেট সদস্য ও একজন হাউস সদস্য একসঙ্গে ওই রাজ্যের ভোট নিয়ে আপত্তি তোলে, তবে এ নিয়ে অধিবেশনে দুই ঘণ্টার বিতর্ক চলবে।
বিতর্কের পরে, সব সদস্য ভোট দেবেন। যদি হাউস ও সিনেট উভয়েরই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা ভোটের বিরুদ্ধে মত দেন, তবে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৮৭ সালের পর আর কোনো নির্বাচনে এমন ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন:
ছুটি শেষ হওয়ার আগেই হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ট্রাম্প
ট্রাম্প সই না করায় বন্ধ হচ্ছে কোটি আমেরিকানের বেকারভাতা
মেয়ের শ্বশুরসহ আরও ২৬ জনকে ক্ষমা করলেন ট্রাম্প
ট্রাম্পের ক্ষমার তালিকায় ১৫ আসামি
ক্ষমতার শেষ চার সপ্তাহে যা করতে পারেন ট্রাম্প
ক্ষমতা ছাড়ার আগে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্প
আর কতবার পরাজিত হলে ট্রাম্প বুঝবেন যে পরাজিত হয়েছেন
১০ বছর আয়কর দেননি ট্রাম্প: নিউইয়র্ক টাইমস
এখনো ফল পাল্টানোর কল্পনায় ট্রাম্প, হোয়াইট ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন
ট্রাম্প যা করছেন, যা করতে পারেন এবং পরিণতি: আলী রীয়াজের বিশ্লেষণ
‘ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে’ ফাইজারের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিলো এফডিএ
Comments