জর্জিয়ার ফল পাল্টাতে ট্রাম্পের চাপ, ফোনালাপ ফাঁস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন পোস্ট গতকাল রোববার একটি ফোনালাপ প্রকাশ করেছে। সেখানে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজারের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায় ট্রাম্পকে। ২ জানুয়ারি হওয়া এই ফোনালাপে নিজের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট ‘খুঁজতে’ রাফেনসপারজারকে নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
ফোনালাপে শোনা যায়, ট্রাম্প বলছিলেন, ‘আমি শুধু চাইছি ১১ হাজার ৭৮০ ভোট খুঁজে বের করতে।’
নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী জর্জিয়াতে জো বাইডেন পেয়েছেন ২৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৩টি ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪ লাখ ৬১ হাজার ৮৫৪টি ভোট। অর্থাৎ, ট্রাম্প ১১ হাজার ৭৭৯ ভোটে পিছিয়ে আছেন। বাইডেনের চেয়ে এক ভোটে এগিয়ে গেলেই এই রাজ্যের ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট যোগ হয়ে যাবে ট্রাম্পের খাতায় এবং এই রাজ্যে জয়ের ব্যাপারে তিনি যা বলেছিলেন তা সত্য প্রমাণিত হবে।
Respectfully, President Trump: What you're saying is not true. The truth will come out https://t.co/ViYjTSeRcC
— GA Secretary of State Brad Raffensperger (@GaSecofState) January 3, 2021
দেশটির ৫০টি রাজ্যের সবগুলোই নির্বাচনের ফলাফল সার্টিফাইড করেছে। কয়েকটি রাজ্যে পুনরায় ভোট গণনা হয়েছে এবং আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে ট্রাম্পের করা মোট ৬০টি চ্যালেঞ্জ এখন পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে।
সর্বশেষ ঘোষিত ফল অনুযায়ী, জো বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি।
আগামী ৬ জানুয়ারি এই ফলাফলের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে দেশটির কংগ্রেস। এরপর আগামী ২০ জানুয়ারি দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে জো বাইডেনের।
এই ফলাফল পরিবর্তনের জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানান মন্তব্যের পাশাপাশি একের পর এক মামলা করেছেন এবং তাতে হেরেছেন।
সেই প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে এবার ভোটের ফলাফল বদলে দিতে নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পুনরায় ভোট গণনা করা করে ‘ভোট পাওয়া গেছে’ বলার মধ্যে কোনো ‘ভুল নেই’ বলে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে টেলিফোনে বলেছেন ট্রাম্প। এসময় তিনি দাবি করেন, তিনিই জিতেছেন।
এর উত্তরে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে চ্যালেঞ্জ করছেন মি. প্রেসিডেন্ট।’
রাজ্যের ভোট ঠিকভাবেই একাধিকবার গণনা করা হয়েছে এবং নতুন ভোট খোঁজার কাজটি করবেন না বলে ট্রাম্পকে বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন ব্র্যাড রাফেনসপারজার। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সংখ্যায় অটল থাকব, আমরা বিশ্বাস করি এই সংখ্যা সঠিক।’
ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে গতকালই ট্রাম্প এক টুইট বার্তা দেন। সেখানে রাফেনসপারজারের সঙ্গে কথা হওয়ার বিষয় জানিয়ে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি ফুলটন কাউন্টি এবং জর্জিয়াতে ভোট কারচুপির বিষয়ে স্টেট সেক্রেটারি ব্র্যাড রাফেনসপারজারের সঙ্গে গতকাল কথা বলেছি। তবে তিনি “টেবিলের নিচে ব্যালট” স্ক্যাম, ব্যালট পেপার নষ্ট করা, অন্য রাজ্যের ভোটার, মৃত ভোটার এবং আরও অনেক বিষয়ে করা প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি কিংবা দিতে পারেননি। তার কোনো ধারণাই নেই!’
ফিরতি টুইট বার্তায় ব্র্যাড রাফেনসপারজার লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প: আপনি যা বলছেন, তা সত্য নয়। সত্য বেরিয়ে আসবে।’
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ফোনালাপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউজ। ট্রাম্পের এমন আচরণকে ‘ক্ষমতার চরম অপব্যবহার’ বলে মন্তব্য করেছেন নব নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ।
জর্জিয়ার গভর্নর এবং স্টেট সেক্রেটারি দুজনই রিপাবলিকান। তবে তারা প্রেসিডেন্টের সরাসরি চাপেও নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে আসেননি। পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনাসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের কর্মকর্তাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ, হুমকি ও প্রলোভনের বিপক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।
Comments