ভারতের ভ্যাকসিন, ব্রাজিলের কূটনৈতিক তৎপরতা

ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্রের পর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, রপ্তানি জটিলতা এড়িয়ে দ্রুত ভ্যাকসিন পেতে আশাবাদী ব্রাজিল। গতকাল সোমবার এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদন মতে, ব্রাজিলের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ভ্যাকসিনের শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালের পর ফল না পাওয়া সত্ত্বেও ভারত বায়োটেকের তৈরি বিকল্প ভ্যাকসিন পেতে প্রাথমিক চুক্তি করেছে দেশটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভ্যাকসিন পেতে ইতোমধ্যেই পিছিয়ে পড়েছে ব্রাজিল। প্রতিবেশী চিলি ও আর্জেন্টিনায় ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

ব্রাজিলের ফাইক্রুজ ইনস্টিটিউট ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আমদানির পরিকল্পনা করছে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ওই বায়োমেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন প্রস্তুত রাখা হবে।

এর আগে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনভিসা নতুন বছর উপলক্ষে ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছিল।

গত রোববার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, করোনার ভ্যাকসিন রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে মনে করছেন তিনি।

নিষেধাজ্ঞা ও রফতানি জটিলতা এড়িয়ে ভ্যাকসিন পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে ব্রাজিল।

ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়টি সম্পর্কে ব্রাজিলের দুই কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের চালান আসার ক্ষেত্রে তা যাতে দেশটির রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞার আওতায় না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে ব্রাজিলের কূটনীতিকরা কাজ করছেন।

ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে ফাইক্রুজ।

ব্রাজিলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার আশাবাদী যে ভারত থেকে ভ্যাকসিন আমদানি করা যাবে। এক্ষেত্রে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা হবে।

ভারত বায়োটেকের তৈরি ভ্যাকসিনটি ভারতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার একদিন পর ব্রাজিলের ক্লিনিকগুলোর একটি সংস্থা ভারত বায়োটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ কেনার পরিকল্পনা জানিয়েছে।

ভারত বায়োটেক ‘কোভ্যাক্সিন’ অনুমোদনের জন্য ব্রাজিলের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক আনভিসার কাছে এখনও আবেদন করেনি। সংস্থাটি বলেছে, ওই দেশে ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হতে হবে।

ব্রাজিলিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ভ্যাকসিন ক্লিনিকের (এবিসিভিএসি) প্রধান জেরাল্ডো বার্বোসার ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে। ভারত বায়োটেকের সঙ্গে ইতোমধ্যেই একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে বলেও সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘কোভ্যাক্সিন’র ডোজগুলো আগামী মার্চের মাঝামাঝি ব্রাজিলে পৌঁছাতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে অনুমোদনের পর বেসরকারি ক্লিনিকগুলো ভ্যাকসিনটি বিক্রি করতে পারবে।

রোববার আনভিসা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ব্রাজিলে এই ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রয়োজন।

গত রোববার ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিসিজিআই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ ও সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন দুটি অনুমোদন দেয়।

আজ জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের তথ্য মতে, করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। দেশটিতে মারা গেছেন এক লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫২ জন।

সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় ও মৃত্যুর দিক থেকে তৃতীয়তে থাকা ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি তিন লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৪ জন, মারা গেছেন এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৫০ জন।

Comments