শীর্ষ খবর

স্যামসন এইচ চৌধুরী: যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন

তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য জীবনভর চেষ্টা করেছেন, পৌঁছেছেন সাফল্যের চূড়ায়। পাবনার আতাইকুলা গ্রামের সামান্য একটি ওষুধের দোকান থেকে গড়ে তুলেছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ। তিনি স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী।
স্যামসন এইচ চৌধুরী। ছবি: স্টার

তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য জীবনভর চেষ্টা করেছেন, পৌঁছেছেন সাফল্যের চূড়ায়। পাবনার আতাইকুলা গ্রামের সামান্য একটি ওষুধের দোকান থেকে গড়ে তুলেছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ। তিনি স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী।

আজ ৫ জানুয়ারি স্যামসন এইচ চৌধুরীর নবম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের র‌্যাফেল হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুবার্ষিকীতে পাবনায় তার স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।  

স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্ম ১৯২৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বাবা ইয়াকুব এইচ চৌধুরী ছিলেন একজন মেডিকেল প্রাকটিশনার। স্যামসন এইচ চৌধুরী জীবনের শুরুতে নানা চাকরির মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করলেও স্বপ্নচারী এ মানুষটি স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজে থেকে কিছু গড়ে তোলার, নতুন কিছু করার, যা শুধু চাকরি করে করা সম্ভব হতো না।

আর তাই চাকরি ছেড়ে, ৫০ এর দশকে তিনি পাবনার আতাইকুলা বাজারে একটি ছোট ওষুধের দেকান দেন, শুরু হয় নিজ থেকে কিছু করার উদ্যোগ। ছোট হলেও একটি স্বাধীন ব্যবসা যা থেকে তিনি আরও বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন এবং তাই করলেন।

আতাইকুলায় তার গ্রামের বাড়িতে গড়ে তোলেন ওষুধের ছোট কারখানা যেখান থেকে ওষুধ প্রস্তুত করে তিনি নিজের দোকান এবং আশেপাশের আরও অনেক দোকানে বিক্রি শুরু করেন।

স্বপ্নচারী মানুষটি আরও এগিয়ে যেতে উৎসাহিত হন, ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চলে আসেন পাবনা শহরে। ১৯৫৮ সালে পাবনা শহরের শালগারিয়া গ্রামে কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি ওষুধের কারখানা নাম দেন ‘স্কয়ার’। সেই থেকে যাত্রা শুরু আজকের বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপের।

ওষুধের ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও স্কয়ার গ্রুপ এখন তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্য উৎপাদনের মধ্য দিয়ে, আর এ সবটাই হয়েছে স্যামসন এইচ চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, মেধা, শ্রম আর দূরদর্শীতার জন্য।

স্যামসন এইচ চৌধুরী শুধু ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েই তার কাজ সীমাবদ্ধ রাখেননি, বাবার কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন কীভাবে মানুষের সেবা করতে হয়, কীভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হয়। আর সে কারণেই শুধু ব্যবসার জন্য নয়, একজন মানুষ হিসেবে স্যামসন এইচ চৌধুরী মানুষের পাশে দাঁরিয়েছেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছেন খাদ্য, ওষুধ, আর মুক্তিযুদ্ধের জন্য ফান্ড সংগ্রহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার পরিবারের দুই ছেলেসহ অনেকেই জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেন।

স্যামসন এইচ চৌধুরী তার নিজ গ্রাম আতাইকুলায় গরিব অসহায় এতিম শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন একটি এতিমখানা, প্রায় ৬০ জন এতিম শিশু এ এতিমখানায় থাকা খাওয়াসহ জীবন গড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

পাবনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক এ বি এম ফজলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্যামসন এইচ চৌধুরী শুধু একজন ব্যবসায়ী ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন স্বপদ্রষ্টা, তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আর তাই আজ পাবনা জেলাকে সারা দেশের মানুষ চেনে কারণ এখানে থেকেই তিনি গড়ে তুলেছেন দেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ। ব্যবসার মাঝে কীভাবে নীতি নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়া যায় তা নিজের জীবনে দেখিয়ে গেছেন তিনি।  

স্যামসন এইচ চৌধুরী ২০০১ সালে দ্য ডেইলি স্টার দি এইচ এল বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি দেশ বিদেশে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে।

Comments

The Daily Star  | English

Covid impact, inflation push up poverty

Around 27.51 lakh more Bangladeshi people fell into poverty in 2022 due to the global food price hike and post Covid-19 impacts, according to a paper by a researcher at the International Food Policy Research Institute (IFPRI).

1h ago