চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ
ভারতীয় পেঁয়াজ আসার পর থেকে দেশে পেঁয়াজের দরপতন হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হাজার হাজার টন পেঁয়াজ খালাস নিচ্ছেন না এসব আমদানিকারকরা। বন্দরে বর্তমানে ২৪ হাজার মেট্রিক টন আমদানিকৃত পেঁয়াজ পড়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর গত শনিবার থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করেছে ভারত। পরদিন রোববার সকালে পাঁচ ট্রাকে প্রায় ৬৫ টন ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে আসে। হঠাৎ করে দেশীয় বাজারে এ পেঁয়াজ আসার কারণে বিপাকে পেঁয়াজ চাষি ও আমদানিকৃত ব্যবসায়ীরা। ফলে বন্দরে পড়ে থাকা ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ খালাস নিচ্ছেন না তারা। এতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পণ্য আমদানির পর খালাস নেওয়ার নির্ধারিত ৪৫ দিন পার হলে এসব পেঁয়াজ নিলামে তোলা হবে। কিন্তু ততদিনে এসব পেঁয়াজ পচে যাবে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এসব পেঁয়াজ আমদানি পর্যায়ে দাম পড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। ফলে বড় অংকের লোকসান এড়াতে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ খালাস নিচ্ছেন না।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি এবং সংকট তৈরি হওয়ার পর গত কয়েক মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরও প্রায় ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ। প্রায় একমাস ধরে এসব পেঁয়াজ বন্দরে পড়ে থাকলেও আমদানিকারকরা সেগুলো খালাস নিচ্ছেন না। পেঁয়াজের চালান খালাস নিতে আমদানিকারকদের দাপ্তরিক চিঠি দিয়েও সাড়া মিলছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমদানির পর খালাস নেওয়ার জন্য ৪৫ দিন সময় পান আমদানিকারক। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমদানিকারকরা পেঁয়াজের চালান খালাস না নিলে নিয়ম অনুযায়ী এসব পেঁয়াজ নিলামে তুলবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’
পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মার্কেট খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়া মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন হওয়ায় আমদানিকারকরা বন্দর থেকে পেঁয়াজের চালান খালাস করছেন না।’
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘গত ছয় মাসে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, ইরান ও রাশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আরপি নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তার বিপরীতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বন্দর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’
অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত অন্যান্য দেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে লাগামহীন পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এমনকি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। পরে সরকার পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস করার পর ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার গত বছরের মতো মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রঙের ও স্বাদের পেঁয়াজ আমদানি করে।
অনলাইনে ২৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে টিসিবির পেঁয়াজ
খাতুনগঞ্জের অপর এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। এ ছাড়া, বন্দরেও পড়ে আছে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ। এর মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে কীভাবে আসে- সেটাই হলো বড় প্রশ্ন। এখন বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজের ব্যবসা করার সত্ত্বেও বর্তমান বাজারে কারা, কীভাবে পেঁয়াজ আনছে তা আমরা জানি না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে পার্থক্য মাত্র ২ লাখ টনের। বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৩ লাখ টনের বেশি। আর চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। তারপরও শুধু নষ্ট হওয়ার কারণে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কারণ দেশে উৎপাদিত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য যে আধুনিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়ে নেই।
Comments