ডেইলি স্টারকে যা বললেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা
‘দেশে এখনো মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়নি; সুষ্ঠু ভোট হলে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা অনেকেই জিততেন না; দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ও বৃহত্তর নোয়াখালীতে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে’, এমন মন্তব্য করে বর্তমানে দেশের রাজনীতির আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
কারা আপনাকে হুমকি দিচ্ছে?
‘মূলত নোয়াখালী, ফেনী ও সন্দীপ থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ফেক আইডি, মোবাইলের মাধ্যমে, বিভিন্ন মানুষের কাছে এসব হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমি যাদের বিরুদ্ধে বলছি তারাই মূলত এগুলো করছে। বিশেষ করে বৈঠক করে আমাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। গতকাল আমার অনেক লোক এ নিয়ে কান্নাকাটি করেছে। আমার আত্মীয়-স্বজনও কান্নাকাটি করছে। যাদের ফেনীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে, তারা শুনেছে যে, আমার বিরুদ্ধে বৈঠক করা হচ্ছে। সেখানে আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
যারা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, সবাই কি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত?
‘হ্যাঁ, তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত।’
কেন্দ্রীয় কোনো নেতা কি কোনো ধরনের চাপ দিয়েছেন?
‘না, কেন্দ্রীয় কেউ আমাকে কোনো ধরনের চাপ দেয়নি।’
হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
‘আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি। এসপিকেও জানিয়েছি গতকাল। উপজেলা থানাকে জানিয়েছি।’
নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে কী বলছিলেন?
‘আমি এখান থেকে (নোয়াখালী) প্রমাণ করতে চাই যে, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন ইচ্ছে করলে করা যায়। এবং গণতন্ত্র কী জিনিস, সেটা জাতীয় দলের সব নেতাকর্মীকে দেখিয়ে দিতে চাই।’
তার মানে এখন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না?
‘একেবারে যে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, সেটা নয়। তবে, বেশিরভাগ জায়গায় যে অনিয়ম হচ্ছে, সেটা অস্বীকার করা যায় না। এগুলো কোনো জাতীয় বিষয় না। এগুলো স্থানীয়। স্থানীয়ভাবে যাদের দৈহিক শক্তি, টাকার জোর আছে, তারাই এগুলো করে। বৃহত্তর নোয়াখালীতে দুয়েকটা জায়গায় ছাড়া কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তারা ও আমাদের অতি উৎসাহী লোকেরা, শেখ হাসিনা চেয়েছেন ফল, তারা গাছসহ ফল দিয়েছেন।’
গণতন্ত্র কী জিনিস, সেটা জাতীয় দলের সব নেতাকর্মীকে দেখিয়ে দিতে চান। তার মানে দেশে কি এখন গণতন্ত্র নেই?
‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান। ভোট জালিয়াতি করে এটা করেছে। তখন থেকেই গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে।’
কিন্তু, বর্তমান সরকার বলছে যে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেটা কি তাহলে ঠিক না?
‘পুনঃপ্রতিষ্ঠা পুরোপুরি হয়েছে, সেটা ঠিক না। তবে, সরকার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে সেটা চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টার সঙ্গে আমাদের সবার সহযোগিতা করা উচিত। আমি এই বসুরহাট পৌরসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করব।’
নোয়াখালীর অনিয়মের অবস্থা কেমন?
‘সেখানে টেন্ডারবাজি হয়, চাকরি বাণিজ্য হয়। গরিব মানুষকে একটা পুলিশের চাকরি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। পিয়নের চাকরি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের চাকরি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। দুনিয়ার অনিয়ম এখানে চলছে। ফেনীতে যে উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম ভাইকে মারা হয়েছে, প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে প্রথমে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরে তাকে গাড়িতে তুলে গাড়িসহ জ্বালিয়ে তাকে মারা হয়েছে। কিন্তু, এর ন্যায়বিচার তার পরিবার পায়নি। আমি বলেছি পুনঃতদন্ত করে এই ঘটনার ন্যায়বিচার করা হোক।’
সবশেষে জানতে চাই, এবারও আপনি বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন?
‘এবারও পৌরসভা নিার্বচনে আমি দলের মনোনয়ন পেয়েছি। আমি যতটুকু জেনেছি, এলাকায় আমার ৬০-৬৫ ভাগ সমর্থন আছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
Comments