হামলাকারীদের পরিচয়

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনা সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু, সেদিন দেশটির সবচেয়ে সুরক্ষিত ভবনগুলোর একটিতে কারা এমন সহিংস হামলা চালিয়ে ছিলেন?

আজ শুক্রবার বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এমন প্রশ্ন রেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

সাধারণভাবে গণমাধ্যম সূত্রে সবাই জানতে পেরেছেন যে গত বুধবার কংগ্রেসের বৈঠক চলাকালে ক্যাপিটল ভবনে হামলাকারীরা ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। তাদের প্রতি ট্রাম্প ‘ভালোবাসা’ও প্রকাশ করেছিলেন। তাদেরকে ‘স্পেশাল’ হিসেবেও অভিহিত করেছিলেন তিনি।

হামলাকারীদের হাতের পতাকা ও বিভিন্ন প্রতীক দেখে তাদের মতাদর্শ বিশ্লেষণ করা হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে সেদিন অনেক ব্যক্তিও মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন।

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

কিউঅ্যানন সদস্য

ক্যাপিটল ভবনে হামলায় গোপন ‘উগ্র ডানপন্থি’ সংগঠন কিউঅ্যাননের সদস্যরা ছিলেন উল্লেখ করে বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলাকারীদের কয়েকজনের ছবি দেখে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কিউঅ্যাননের সদস্যদের অনেকে অনলাইন প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তাদের অনেককে বিভিন্ন সময় ট্রাম্পের সমাবেশেও দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা গেছে— এক ব্যক্তির চেহারায় আমেরিকার পতাকা আঁকা, মাথায় শিং সম্বলিত ফারের টুপি ও হাতে বর্শায় বাঁধা আমেরিকার পতাকা।

তাকে জ্যাক অ্যাঞ্জেলি হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি কিউঅ্যানন’র এক সুপরিচিত সদস্য। তিনি নিজেকে ‘কিউঅ্যানন শ্যামান’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

গোপন সংগঠনটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার যোগ দেওয়ার প্রমাণ ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তার ফেসবুক পেজে উগ্রবাদী মতবাদ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারের ছবি রয়েছে।

দ্য প্রাউড বয়েজ

ক্যাপিটল ভবনে হামলাকারীদের মধ্যে অপর উগ্রবাদী সংগঠন ‘দ্য প্রাউড বয়েজ’র সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

২০১৬ সালে গঠিত অভিবাসনবিরোধী এই সংগঠনটির সব সদস্যই পুরুষ। প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে ট্রাম্প এই শ্বেতাঙ্গবাদী সংগঠনটির প্রশংসা করেছিলেন।

হামলার দিন সংগঠনটির নিক ওচস নামের এক সদস্য সেলফি তুলে টুইটারে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘হ্যালো ফ্রম দ্য ক্যাপিটল লোল’। তিনি ক্যাপিটল ভবনের ভেতর থেকে লাইভ স্ট্রিমিং করেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে নিক ওচস নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রাউড বয় এলডার ফ্রম হাওয়াই।’

অনলাইনে প্রভাবিত

অনলাইন প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে অনেকে সেদিন ক্যাপিটল ভবনে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ টিম জিওনেট। তিনি ‘বেকড আলাস্কা’ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন।

ক্যাপিটল ভবন থেকে তার লাইভ স্ট্রিম কয়েক হাজার মানুষ দেখেছিলেন। তিনি সেসময় হামলাকারীদের সঙ্গে কথা বলার দৃশ্যও প্রচার করেছিলেন।

ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবেও টিম জিওনেট পরিচিত।

দোকানদারদের নাজেহাল করা ও মহামারির মধ্যেও মাস্ক পরায় তার অস্বীকৃতির ভিডিও ইউটিউবে পোস্ট করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি তার চ্যানেল গত অক্টোবরে বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে টুইটার ও পেপালও তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল।

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

কমিউনিস্টদের উপস্থিতি?

ট্রাম্প সমর্থকদের ছদ্মবেশে কমিউনিস্টরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিলেন বলে অনেকে দাবি করছেন। তারা হামলায় বামপন্থি সংগঠন ‘অ্যান্টিফা’র সদস্যদের অংশগ্রহণের কথাও বলছেন।

এমন অভিযোগ যারা করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বনামধন্য রিপাবলিকান নেতা ম্যাট গিটজ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে এক হামলাকারীর গায়ে কমিউনিস্টদের হাতুরির ট্যাটু দেখা গেছে। এটিকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে বলা হচ্ছে, এই ব্যক্তি ট্রাম্পের সমর্থক নন।

বিবিসি’র প্রতিবেদন মতে, একটু মনোযোগ দিয়ে তাকালে দেখা যায়, সেই হাতুরির ট্যাটুটি ভিডিও গেম সিরিজ ‘ডিজঅনার্ড’ থেকে নেওয়া।

অনেকে বলছেন, ‘কিউঅ্যানন’ সংগঠনের জ্যাক অ্যাঞ্জেলি আরিজোয়ানা অঙ্গরাজ্যে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনেও ছিলেন। তবে, সেই আন্দোলনে তিনি মূলত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিলেন। সে সময় তার হাতে কিউঅ্যাননের প্রতীক দেখা গিয়েছিল।

পতাকা প্রতীক

ক্যাপিটল ভবনে হামলার সময় হামলাকারীদের বিভিন্ন রকমের পতাকা ও প্রতীক বহন করতে দেখা গিয়েছিল। তাদের অন্তত একজনের হাতে ছিল কনফেডারেট পতাকা। এটি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় দাসপ্রথার সমর্থকরা ব্যবহার করতেন।

অনেকে এই পতাকাটিকে বর্ণবাদের প্রতীক হিসেবে মনে করে থাকেন। অনেকে আবার এই পতাকাকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যমান সংস্কৃতির অংশ বলে বিবেচনা করেন।

এই পতাকার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এই পতাকা দাসপ্রথার প্রতীক নয়… বরং আমি মনে করি, এটি বাক স্বাধীনতার প্রতীক।’

এ ছাড়াও, এক হামলাকারীর হাতে কুণ্ডলী পাকানো সাপের ছবি সম্বলিত হলুদ পতাকা দেখা গিয়েছিল। অনেকে এ পতাকাকে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশবিরোধী আমেরিকান বিপ্লবের প্রতীক বলে মনে করে থাকেন।

সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্কার’র প্রতিবেদন মতে, সাম্প্রতিক সময়ে রক্ষণশীল ‘টি পার্টি’র কর্মীদের প্রতীক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরাও গত দুই দশক ধরে এই প্রতীক ব্যবহার করে আসছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মার্গারেট ওয়ার।

হামলাকারীদের শাস্তি

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ক্যাপিটল ভবনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

দেশটির বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি মাইকেল শেরইউন সংবাদ বিফ্রিংয়ে বলেছেন, ‘সবকিছুর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও সহিংস বিক্ষোভের বিষয়টিও রয়েছে।’

আজ সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাপিটল ভবনে হামলাকারীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। তারা চাকরি হারাতে পারেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে হামলাকারীদের সঙ্গে নিজেদের এক কর্মীকে দেখে ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। তার পরনে প্রতিষ্ঠানটির আইডি ব্যাজ ছিল বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

নিজে নিজেকে ক্ষমার পথ খুঁজছেন ট্রাম্প

মেয়াদ শেষের আগেই ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান

টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে পেলেন ট্রাম্প, ফেসবুকে এখনো নিষিদ্ধ

ক্যাপিটল ভবনে হামলা: ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার ৩ সদস্যের পদত্যাগ

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ‘কালো দিন’

ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা: ফার্স্ট লেডির চিফ অব স্টাফের পদত্যাগ

ছবিতে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলা

নিহত ৪: ওয়াশিংটনের কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলা

Comments

The Daily Star  | English

Not going anywhere till the job is done: Adviser Wahiduddin Mahmud

When asked about the chief adviser's resignation the adviser said, 'But he did not say he was leaving'

35m ago