শেষ ১১ দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন ট্রাম্প?

2021-01-08T163549Z_1935959512_RC2S3L9QXZWP_RTRMADP_3_USA-ELECTION-TRUMP.JPG
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে গত বুধবারের হামলার পর থেকে সে বিষয়ে দায়বদ্ধতা, সহযোগীদের পদত্যাগ, তার পদত্যাগ দাবি, অভিশংসনের হুমকি সবকিছু মিলিয়ে মানসিকভাবে সংকটে থাকার কথা তার। এ অবস্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ ১১ দিন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়েই যাবে বলে সিএনএন’র এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।

একটি ভিডিওতে ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের দুই মাসেরও বেশি সময় পরে এই প্রথম দ্ব্যর্থহীনভাবে তিনি স্বীকার করলেন যে, ১১ দিন পর তিনি আর প্রেসিডেন্ট থাকছেন না।

তবে আগত প্রশাসনকে সর্বাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করার সমর্থন দেওয়ার পর ‘মসৃণ, সুশৃঙ্খলভাবে ও নির্বিঘ্নে’ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় কোনো কৃতিত্ব পাচ্ছেন না ট্রাম্প। ভিডিও বার্তাটি দেখে তিনি অফিস চালানোর জন্য মানসিকভাবে সমর্থ আছেন কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ট্রাম্পের এক উপদেষ্টা সিএনএনকে বলেন, ‘তার প্রায় সব সিনিয়র কর্মকর্তাই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন এবং তার অভিশংসন আসন্ন। আমি মনে করি যে, ভিডিওটির মাধ্যমে সহানুভূতি আদায়ের জন্যই এটি বানানো হয়েছে।’

এর মধ্যেই পরিবহনমন্ত্রী ইলেন চাও ও শিক্ষামন্ত্রী বেটসি দেভোসসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র সহযোগী ট্রাম্পের রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণের কারণে পদত্যাগ করেছেন। অন্যরাও কেবল আগামী দুই সপ্তাহ দেশকে ঠিকভাবে চালাতে স্বপদে অবস্থান করছেন।

হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলি বৃহস্পতিবার সিএনএনকে এক সাক্ষাত্কারে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি এসময় মন্ত্রিসভায় থাকলে, প্রেসিডেন্টের এখনই অপসারণের পক্ষে অবস্থান নিতেন। ট্রাম্পকে ‘পুরোপুরি ত্রুটিপূর্ণ একটা মানুষ’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ক্যাপিটল হিল তাণ্ডব নিয়ে শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে ট্রাম্পের খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। হাউজের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে তার ‘উত্তপ্ত’ বাক্য বিনিময় হয়েছে।

ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে খারাপ খবর হচ্ছে, ডেমোক্রেটিক হাউজের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেট নেতা চাক শুমার একটি বিবৃতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ২৫তম সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করার কথা বলেছেন। ওই সংশোধনী অনুযায়ী কোনো প্রেসিডেন্ট ‘দায়িত্ব পালনে অক্ষম’ হলে মেয়াদ শেষের আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া যায়। এজন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ভোটাভুটির প্রয়োজন রয়েছে।

প্রেসিডেন্টের বিপজ্জনক ও রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে তাত্ক্ষণিকভাবে পদ থেকে অপসারণ করা দরকার, বিবৃতিতে বলেন তারা।

মাইক পেন্সের পরামর্শদাতারা ট্রাম্পকে পদত্যাগের অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য ২৫তম সংশোধনীর বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে যেহেতু এটি একটি বেশ জটিল সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। তাই শেষ পর্যন্ত এটি করার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে সিএনএন।

কঠোর রক্ষণশীল ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সম্পাদকীয়তে কংগ্রেসে হামলার দায় ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তার পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে।

জার্নালের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সবার স্বার্থে তার অভিশংসন বা অপসারণকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এতে তার রাজনৈতিক ভিত্তি যে নড়বড়ে হয়ে গেছে, তাই বোঝা যায়।

২০ জানুয়ারির আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্পকে সরিয়ে দিতে অভিশংসনের দাবি তুলেছে ডেমোক্রেটরা। ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি রিপাবলিকানদের মধ্যেও বাড়ছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। রিপাবলিকান দলের বেশ কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য মনে করছেন যে আগামী ২০ জানুয়ারির আগেই ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা উচিত।

এক মেয়াদে এক প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি অকল্পনীয় হলেও, এর মধ্যে দিয়ে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে অনাচারী, অশান্ত প্রেসিডেন্সির উপযুক্ত সমাপ্তি হতে পারে।

মার্কিন ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার হাউজের ডেমোক্রেটদের প্রথম পূর্ণ কক্কাস সভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসনের বিষয়ে দ্রুত ভোটের প্রস্তাব তোলার সম্ভাবনা আছে বলে একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে।

শুক্রবার বিকালে পেলোসি কক্কাসের সভায় বলেন, তিনি ট্রাম্পের পদত্যাগ করার কথাই বলবেন। কিংবা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও মন্ত্রিসভাকে ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

তবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে, যদি এভাবে না হয়, তবে অভিশংসনই আসল বিকল্প। ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার জন্য হাউস ডেমোক্রেটিক কক্কাসে এখন ২০১৯ সালের তুলনায় আরও বেশি সমর্থন আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Not going anywhere till the job is done: Adviser Wahiduddin Mahmud

When asked about the chief adviser's resignation the adviser said, 'He did not say he was leaving'

2h ago