অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বলায় জাতীয়ভাবে আমাকে উন্মাদ বলা হয়: কাদের মির্জা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, ‘অনিয়মের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি এই নির্বাচন করছি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমি যখন অনিয়ম-অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি ও প্রতিবাদ করি, তখন জাতীয়ভাবে বলা হয় আমি নাকি উন্মাদ ও পাগল। আমি এর বিচারটা আপনাদের জনগণের কাছে দিলাম। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবো আমি পাগল না সুস্থ।’
আজ শনিবার সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে নির্বাচনী এক সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা। সম্প্রতি দলীয় নেতাদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম নিয়ে বক্তব্য দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তুলেছেন তিনি।
সরকার দলের নীতি-নির্ধারক ও কেন্দ্রীয় দুই নেতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাকে উন্মাদ বলা হয়েছে। গোপালগঞ্জের ৯৯ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন। সেখান থেকে এক নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। এখন তিনি মন্ত্রী নেই। তিনি কী কী অনিয়ম করেছেন, তা সবাই জানেন। তাই তিনি এবার মন্ত্রী হতে পারেননি। আরেকজন নেতা বলেন আমার নাকি দায়িত্বশীলতার অভাব আছে।’
ওই নেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর করা হয়েছে। আপনি কী করেছেন? আপনার দায়িত্বশীলতার অভাব রয়েছে। আমি সারাদেশের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলিনি। আমি কথা বলেছি ফেনী ও নোয়াখালীর অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অসহায়। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আজ শেখ হাসিনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এসব ষড়যন্ত্র তাকে একাই মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কাদের মির্জা বলেন, ‘আজকে দলের কিছু চাটুকার ও দুর্নীতিবাজ রাতদিন শেখ হাসিনাকে কান কথা বলে উত্ত্যক্ত করছেন। তাকে (শেখ হাসিনাকে) দল, দেশ ও দেশের মানুষকে দেখতে হয়। আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়। তার কি কোম্পানীগঞ্জ বা নোয়াখালীর বিষয় দেখার সময় আছে? দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব শেখ হাসিনাকে দেখতে হচ্ছে। মন্ত্রী, আমলা ও সাংবাদিকদের মধ্যেও ভালো লোক আছে। তবে, অধিকাংশই খারাপ। আমি দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। এখন চোর-দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদেরও বিচার করার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করছি। একমাত্র শেখ হাসিনাই দলের দুর্নীতিবাজদের বিচার করেছেন। খালেদা জিয়া দুর্নীতিবাজ বিএনপি নেতা পিন্টুর বিচার করেননি। কিন্তু, শেখ হাসিনা নিজ দলের দুর্নীতিবাজদের বিচার করে দেশবাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন।’
আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। এই ব্যাপারে নোয়াখালীর প্রশাসন উদাসীন।’ নোয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনীর এমপি নিজাম হাজারীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘কবিরহাট ও ফেনীতে বসে কোম্পানীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র চলছে।’
প্রশাসনের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু লোকের কাছে অস্ত্রের জোগান বাড়ানো হয়েছে। গত পরশু দিন চট্টগ্রাম থেকে কবিরহাটে অস্ত্রের চালান এসেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। নোয়াখালীর একজন অপকর্মকারী নেতার মাস্ক ডিসির মুখে লাগানো রয়েছে। তার কাছে কি ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে? তিনি মাসিক মাসোয়ারা খান।’
‘অবৈধ অস্ত্র সম্পর্কে আমি নোয়াখালীর এসপিকে বলেছি। এখন পর্যন্ত এসপির কোনো আওয়াজ নেই। ওবায়দুল কাদের সাহেব এগুলো বিচার না করলে আমি কী করব? আমার এলাকার সব ঘটনা ডিসি ও এসপিকে বলেছি। কিন্তু, তারা কোনো আওয়াজ তুলেননি। পুলিশকে লক্ষ্য করে জামায়াতের লোকজন কোম্পানিগঞ্জে গুলি করেছিল। কিন্তু, সে অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। উপজেলা নির্বাচনেও পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ১৬ জানুয়ারি কোম্পানিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র হয় কিংবা কোম্পানিগঞ্জে কোনো মায়ের বুক খালি হয়, কারো ঘরে অগ্নি সংযোগ করা হয়, তবে তার সব দায়-দায়িত্ব ডিসি-এসপিকে নিতে হবে। এসকল ঘটনা ঘটলে জনতার আদালতে ডিসি-এসপির বিচার করা হবে। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে ডিসিকে প্রধান ও এসপিকে দ্বিতীয় আসামি করে মামলা করা হবে’, বলেন কাদের মির্জা।
এই মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, ‘১৬ জানুয়ারির পৌর নির্বাচনে “আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো” এটা বাস্তবায়ন করব। বঙ্গবন্ধু তার জীবন-যৌবন বিসর্জন দিয়ে এদেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দেশ স্বাধীন করেছেন। ভাতের অধিকার নিশ্চিত হলেও ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নোয়াখালী ও ফেনীর আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির কথা বলার জন্য তিন বার প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি। কিন্তু, কথা বলার সুযোগ পাইনি। দলের কিছু চামচা, ধান্ধাবাজ ও অপরাধীরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে মতলবি কান্না কাঁদে। এতে শেখ হাসিনার মন গলে যায়। নেত্রী একা আর কত করবেন? কোম্পানীগঞ্জে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ‘ ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের ভোট দেবেন। যাকে খুশি তাকে দেবেন। যদি ভোট দিতে কেউ বাধা প্রদান করে, তবে তার ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। এর দায়-দায়িত্ব আমার।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ঘরে ঢুকে গেছেন। তারেক জিয়া চোর। তার কি দেশের জন্য ভালো কোনো কাজ করার মানসিকতা আছে? এখন একমাত্র শেখ হাসিনাই ভরসা। দেশের মানুষের ভাত, কাপড়, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রতিরক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা একমাত্রই শেখ হাসিনাই করতে পারবেন। তিনি ভালো মানুষের মূল্যায়ন করতে জানেন।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি একজন জনপ্রিয় এবং সৎ রাজনীতিবিদ হওয়ায় শেখ হাসিনা তাকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন।’
নির্বাচনী সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খিজির হায়াত খাঁন, সাধারণ সম্পাদক নূরনবী চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল হক নাজিম, বসুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আজম পাশা চৌধুরী রোমেলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা।
আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর এসপি মো. আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মির্জা আবদুল কাদের তার বক্তৃতায় তো কারো বিরুদ্ধে কথা বলা বাদ রাখেননি।’ কবিরহাটে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের কথা সঠিক না বলেও দাবি করেন এসপি।
জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আবদুল কাদের মির্জা তো প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কথা বলেছেন। সেক্ষেত্রে আমার বলার কিছু নেই।’
আরও পড়ুন:
অস্ত্র তাক করে রেখেছে, আমাকে মেরে ফেলতে পারে: কাদের মির্জা
Comments