নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভরত পোশাক শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষ
বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভরত পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে শ্রমিকদের অভিযোগ।
আজ শনিবার দুপুর ১টায় শিমরাইল-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়কের আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সকাল ৮টা থেকে আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে বকেয়া বেতন দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে শিল্প পুলিশ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ, মালিকপক্ষ ও বেপজার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে দুপুর ১টায় মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা আগামী ১৮ জানুয়ারি বেতন পরিশোধের ঘোষণা দেন।
এ ঘোষণায় শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট না হয়ে শিমরাইল-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ যায়। পরে পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হন। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং কয়েকজনকে ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে।
কারখানার শ্রমিক মায়া আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত বছরের ১০ আগস্ট দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে কারখানা বন্ধ করে দেয়। পরে আমাদের বেসিকের ৪০ ভাগ বেতন পরিশোধ করে মালিকপক্ষ। কিন্তু, এখন ডিসেম্বর মাসের বেতন দিচ্ছে না। বেতনের জন্য আমরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি তখন পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। লাঠিচার্জে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। আমাদের দুই শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ।’
শ্রমিকদের ১৮ জানুয়ারি বেতন দেয়া হবে মালিকপক্ষের ঘোষণার পর কেন আন্দোলন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি মালিকপক্ষ কারখানার মেশিন ও আসবাবপত্র সব কিছু সরিয়ে নিয়েছে। যে কোনো সময় এ কারখানাটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিবে। এজন্য শ্রমিকরা ওই আশ্বাসে রাজি হয়নি।’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কুনতং অ্যাপারেলস নামে কারখানাটি মালিকপক্ষ লেঅফ ঘোষণা করেছেন। তবে কয়েকমাস পর আবারও চালু করবেন। যার জন্য বেতন দিয়ে আসছিল। এক মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারছিল না। এজন্য শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করে রাস্তার যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টা পরই যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।’
তিনি বলেন, ‘জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে শিল্প পুলিশ। তবে কোনো শ্রমিককে আটক করা হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জলকামান ও ৫ থেকে ৬টি কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে। তবে, কাউকে আটক কিংবা লাঠিচার্জ করা হয়নি।’
কুনতং অ্যাপারেলসের কারখানার মানব সম্পদ প্রশাসনের মেজর (অব.) মো. শফিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বেপজা সহ শিল্প আইন অনুযায়ী গত ৩ মাস ধরে আমাদের প্রতিষ্ঠান লেঅফ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও আমরা তিন মাস ধরে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে আসছি। তবে, এ মাসে যথা সময়ে বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা কথা বলেছি আগামী ১৮ জানুয়ারি বেতন পরিশোধ করে দিবো।’
কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ গুজব। আমরা নতুন অর্ডার পেলেই আবার কারখানা চালু করব।’
Comments