ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আলোর মিছিল

ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আজ শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিল করে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরা। ছবি: রাশেদ সুমন

রাজধানীতে 'ও' লেভেল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শনিবার ধানমন্ডিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এতে অংশ নেন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, 'দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের যে সংস্কৃতি আমাদের দেশে চলছে সেটার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।'

সন্ধ্যা ৬টায় মিছিলটি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে শুরু করে ধানমন্ডি ১৯ ঘুরে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে শেষ হয়।

রবীন্দ্র সরোবরে বিক্ষোভকারীরা নিহত শিক্ষার্থীর স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন।

মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী নেহা জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভুক্তভোগীর পরিবারকে এক ধরনের হেনস্তার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এটা না করে বরং ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় যেন কোনো দেরি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য নিয়ে যে বিভ্রান্তি চলছে তা কীভাবে ঠিক করা যায় এ নিয়ে ভাবতে হবে। এখানে বয়স নিয়ে লুকোচুরির একটা ব্যাপার দেখা যাচ্ছে। অপরাধী যাতে কিশোর আইনে পার পেয়ে যায় সে কারণে ১৮ বছরের কম বয়সী বলার একটা প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। এ ধরনের বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে প্রশাসনকে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।'

গণমাধ্যমকেও খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

ভিক্টিম ব্লেমিং এর কথা উল্লেখ করে স্কলাসটিকা স্কুলের শিক্ষার্থী রুদমিলা আদনান বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে খুবই বাজেভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে।যেন একটা মেয়ের ধর্ষণ এবং মৃত্যু কিছুই না! এখানে সবাই যেন অভিযুক্তকে বাঁচাতে চাইছে! ভুক্তভোগীর নাম, পরিচয়, তার বাবা মায়ের পরিচয় অনেক গণমাধ্যমই প্রচার করেছে। অথচ অভিযুক্তের ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা ঘটেনি। কেউ কিন্তু অভিযুক্তের স্কুলের নাম প্রকাশ করেনি। এই ধরনের বিষয়গুলোই আসলে ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের জন্য দায়ী।'

সাইবার ক্রাইম বিভাগের এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।

মিছিলে অংশ নেওয়া নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী মাশরুর ফাইয়াজ বলেন, 'যেভাবে মেয়েটিকে ভিক্টিম ব্লেমিং করা হচ্ছে এ নিয়ে আমি লজ্জিত। বলা হচ্ছে, "নারীরা পুরুষের কাছে নিরাপদ নয়", এই ধরনের বার্তা সমস্ত পুরুষ জাতির জন্যই লজ্জাজনক।'

আরেক শিক্ষার্থী তাহসিনা হোসাইন বলেন, 'আমাদের যে রেইপ কালচার এটাকে ভাঙতে হবে। এই একটা মাত্র ঘটনা, সারাদেশে এরকম আরও অনেক ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে যেগুলো আমরা জানতেও পারি না। বাংলা মাধ্যম হোক, ইংরেজি মাধ্যম হোক আর মাদ্রাসা হোক- ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক একটি মানুষও যেন ধর্ষণের শিকার হতে না হয়।'

সমাবেশে অংশ নেওয়া মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষক নিশাত রিতা হক বলেন, 'আমাদের এখন শীতকালীন ছুটি চলছে। স্কুল বন্ধ। তাই অনেকেই এখন দূরে আছেন। গতকালকের সমাবেশেও এসেছিলাম। গতকালকের সমাবেশের পর আজ অনেক শিক্ষক এসেছেন। অভিভাবকরাও এসেছেন। শিক্ষার্থীরা তো আমাদেরই সন্তান। শিক্ষকরা পুরোপুরিভাবে ন্যায় বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের পাশে আছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'গত দুই দিন ধরে দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থী মৃত্যুর এই অপরাধকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মেয়েটাকেই দোষ দেওয়া হচ্ছে। বয়স নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি চলছে। আমার শিক্ষার্থী যে কিনা ক্লাস টেনে পড়ে তাকে ১৯ বছর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্তের কোনো কথাই সামনে আসছে না, যদিও সে নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এটা কেন হবে?'

মিছিলে অংশ নেওয়া অভিভাবকরা বলেন, 'আমাদের মেয়েরা যেন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে সেটাই আমাদের চাওয়া। তারা তো স্বাধীন দেশের নাগরিক।'

মাস্টারমাইন্ড স্কুলের গার্ডিয়ান ক্লাবের সদস্য খাইরুন্নেসা কাজল বলেন, 'মেয়েদেরকে যেমন ছোটবেলা থেকেই এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে তেমনি ছেলেদেরকেও ছোটবেলা থেকে একজন নারীকে কীভাবে সম্মান করতে হয় সেটি শিখাতে হবে। এ ঘটনায় আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই যাতে ভবিষ্যতে কাউকে এমন নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ না করতে হয়।'

সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকেই অভিযোগ করেন, এই ঘটনা আমাদেরকে একটা বার্তা দিয়েছে যে, আমাদের দেশে ধর্ষণের সংস্কৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একটা মানুষ কেন ধর্ষণের শিকার হলো, কেন মারা গেল সেটা নিয়ে কথা না বলে বরং সে কেন বাইরে গেল এটা নিয়ে কথা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Hilsa fish production in Bangladesh

Hilsa: From full nets to lighter hauls

This year, fishermen have been returning with lesser catches and bigger losses.

12h ago