ট্রাম্প কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন?
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে ঘনিষ্ঠ সহযোগী, পরিবারের সসদ্য এমনকি নিজেকেও ক্ষমা করার বিষয়টি বিবেচনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সম্প্রতি, ফক্স নিউজ’র শন হ্যানিটি এক রেডিও শোতে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের উচিত তার পুরো পরিবার ও নিজেকে ক্ষমা করা’।
অফিস ছাড়ার পর ট্রাম্পকে নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত হতে পারে উল্লেখ করে তিনি প্রেসিডেন্টকে তার সংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সেই সম্ভাবনা ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন হ্যানিটি।
প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কিনা এ নিয়ে সম্প্রতি একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
এতে বলা হয়েছে, রিচার্ড নিক্সন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে তার ভূমিকার জন্য পদত্যাগের এক দিন আগে ১৯৭৪ সালে এক সংক্ষিপ্ত আইনি স্মারকলিপিতে বিচার বিভাগ জানিয়েছিলেন যে, একজন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। কারণ কেউই তার নিজের অপরাধ ও মামলার বিচারক হতে পারেন না।
প্রতিবেদন মতে, এখন পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই কখনো নিজেকে ক্ষমা করার চেষ্টা করেননি।
তবে, কয়েকজন আইনি বিশেষজ্ঞ ১৯৭৪ সালের বিচার বিভাগের মতামতের সঙ্গে একমত নন। হার্ভার্ড প্রফেসর অ্যালান ডারশোইটস ২০১৮ সালে লিখেছিলেন, ‘এর উত্তর স্পষ্ট নয়। সম্ভবত আমরা কখনই এর নির্দিষ্ট উত্তর পাবো না।’
অন্যদিকে, সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর অ্যান্ডি ম্যাকার্থিসহ কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে, প্রেসিডেন্টের নিজেকে ক্ষমা করার অনুমতি আছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্প নিজেও বিশ্বাস করেন যে তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন। ২০১৮ সালের জুনে এক টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ‘বহু আইনবিদের সঙ্গে কথা বলে আমি জেনেছি, নিজেকে ক্ষমা করার পূর্ণ ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু, কেন সেটা আমি করতে যাব, আমি তো কোথাও কোনো ভুল করিনি?’
অনেকে বলছেন, ১৯৭৪ সালের বিচার বিভাগের মতামত সত্ত্বেও ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে নিজেকে ক্ষমা করার চেষ্টা করতে পারেন। ভবিষ্যতে বিচার বিভাগ যদি তাকে দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় কেবল তখনই এই বিষয়টি বিচারকের কাছে পৌঁছাবে। আদালত এ নিয়ে তদন্ত করবে। প্রেসিডেন্টের নিজেকে ক্ষমা করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য কিনা তা তখন স্পষ্টভাবে জানা যাবে।
সন্তান, পরিবার, নিকটতম সহযোগীদের ক্ষমা?
প্রেসিডেন্ট কি তার সন্তান, পরিবার ও তার নিকটতম সহযোগীদের ক্ষমা করতে পারেন?
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই তার সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনসহ আরও অনেক সহযোগীদের ক্ষমা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রেসিডেন্টকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ক্ষমা ও দায়মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা’ দিয়েছে।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমার করার ক্ষমতা কতটুকু তা নির্ভর করে সংবিধানের ধারা ও আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তের উপর। প্রেসিডেন্ট চাইলে পুরোপুরি দায়মুক্তি বা শাস্তির মাত্রা কমিয়ে দিতে পারবেন। এছাড়াও, জরিমানা কমানো বা বাতিলও করতে পারেন। তবে, কোনো প্রেসিডেন্ট তার আগের প্রেসিডেন্টের অনুমোদিত ক্ষমা বাতিল বা পাল্টে দিতে পারেন না।
যুক্তরাষ্ট্রে একজন প্রেসিডেন্টের নজির আছে তার পরিবার ও নিকটতম সহযোগীদের ক্ষমা করে দেওয়ার। ২০০০ সালে বিল ক্লিনটন অফিস ছাড়ার আগে সৎ ভাই রজার ক্লিনটন, দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহযোগী সুসান ম্যাকডুগালকে ক্ষমা করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জনাথন অ্যাডলার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট সাধারণত নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য ক্ষমা করতে পারেন। তবে এক বার ক্ষমা করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি যতগুলো ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করেছেন সবগুলো থেকে দায়মুক্তি পাবেন কিনা এ নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে।
প্রেসিডেন্ট ঠিক কতজনকে কেমন অপরাধের জন্য ক্ষমা করতে পারেন— এর সঠিক সীমা জানা যায়নি উল্লেখ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্টই বিভিন্ন গ্রুপকে বিস্তৃত সাধারণ ক্ষমা বা অন্য ছাড়পত্র দিয়েছেন। নিক্সনের ক্ষেত্রে জেরাল্ড ফোর্ডের ক্ষমা ছিল বেশ বিস্তৃত। তিনি তাকে ‘আমেরিকার বিরুদ্ধে সমস্ত অপরাধ’’র ক্ষমা করেছিলেন।
অন্যদিকে, জিমি কার্টার ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যারা সামরিক খসড়ার অবাধ্য হয়েছিলেন তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন।
যারা ফেডারেল ট্যাক্স আদায়কারীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা জারি করেছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন ও জন অ্যাডামস।
জেমস ম্যাডিসন লুইসিয়ায় অনেক জলদস্যুদের ক্ষমা করেছিলেন। আব্রাহাম লিংকন ও অ্যান্ড্রু জনসন গৃহযুদ্ধের পর সাবেক কনফেডারেটদেরও ক্ষমা করেছিলেন।
কোনো রাষ্ট্রপতি চাইলে অভিযোগ দায়ের করার আগেও ক্ষমা করতে পারেন। তবে, বেশিরভাগ আইন বিশেষজ্ঞরা একমত যে, এখনো সংঘটিত হয়নি এমন অপরাধের জন্য কোনো প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করতে পারবেন না। তবে তিনি কোনো পরিকল্পিত অপরাধ যা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এর জন্য ভবিষ্যতে ক্ষমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন।
দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ক্ষমা করার ক্ষমতা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অর্থাৎ, সংবিধান সংশোধনী না হলে আইনসভার এ ক্ষমতা নেই।
ক্ষমার বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট কোনো দুর্নীতি করেছেন কি না— এ নিয়ে সম্ভাব্য তদন্ত হতে পারে। কিছু পরিস্থিতিতে এটিকেও আলাদা অপরাধ হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে দুর্নীতির প্রমাণ পেলেও সম্ভবত তাতে ওই ক্ষমা বাতিল হয় না।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’র প্রতিবেদন মতে, অঙ্গরাজ্যে সংগঠিত অপরাধের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রযোজ্য নয়। তিনি কেবল ফেডারেল অপরাধের জন্য ক্ষমা করতে পারেন।
ট্রাম্প, তার পরিবারের সদস্য বা সহযোগীরা অঙ্গরাজ্যের আইন লঙ্ঘন করলে সেই তদন্তে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রযোজ্য হবে না।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জনিয়েছে, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রসিকিউটররা ট্রাম্পের ট্যাক্স রিটার্ন তথ্যের জন্য আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন।
ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নি সাইরাস ভ্যানস জুনিয়র পরিচালিত সম্ভাব্য বীমা বা ব্যাংক জালিয়াতির মামলায় বিস্তৃত অপরাধমূলক তদন্তের অংশ হিসেবে এটি চাওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পৃথক এক নাগরিক তদন্ত (সিভিল ইনভেস্টিগেশন) পরিচালনা করছেন।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহার করে এই তদন্তগুলো থামানো যাবে না।
আরও পড়ুন:
নিজে নিজেকে ক্ষমার পথ খুঁজছেন ট্রাম্প
বাইডেনের অভিষেকের আগে আরও সহিংসতার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
শেষ ১১ দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন ট্রাম্প?
নিজস্ব যোগাযোগমাধ্যম চালু করবেন ট্রাম্প!
ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ
ট্রাম্পের টুইট: বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাব না
মেয়াদ শেষের আগেই ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান
ক্যাপিটল ভবনে হামলা: ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার ৩ সদস্যের পদত্যাগ
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ‘কালো দিন’
ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা: ফার্স্ট লেডির চিফ অব স্টাফের পদত্যাগ
Comments