বিদ্যুৎ পেল মৌলভীবাজারের ৩৮৩ চা-শ্রমিক পরিবার
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চা-শ্রমিক পরিবারগুলোর প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কেটেছে বিদ্যুৎহীন। দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ থাকলেও কুপি জ্বালিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছিল তাদের। তবে, অবশেষে তারাও বিদ্যুতের আলো পেতে শুরু করেছে। অর্থাৎ দীর্ঘ সময় পর তাদের স্বপ্নও পূরণ হয়েছে।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম গোলাম ফারুক মীর জানান, সেখানকার মোট ৩৮৩টি চা-শ্রমিক পরিবার নতুন করে পল্লী বিদ্যুৎ পেয়েছে। গতকাল তাদের ঘরে বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিজিএম এ তথ্য জানান।
৩৫ বছর বয়সী কৈশলা রায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা-বাগানের একজন স্থায়ী চা-শ্রমিক। কুপি বাতি দিয়ে চলে গেছে তার আগের প্রজন্মগুলো। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘কুপি বাতি বৃষ্টির দিনে ঠিকমতো জ্বলত না। আর শীতকালে মনে হতো যেকোনো সময় আগুন লেগে যেতে পারে। ছনের বাড়িতে এটি আরও বিপদজনক। কিন্তু, আমাদের কোনো উপায় ছিল না। কুপিবাতি ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। এখন বিদ্যুৎ পেয়ে মনে হচ্ছে আলাউদ্দিনের প্রদীপ পেয়েছি।’
আরেক চা-শ্রমিক ঘনশ্যাম রবিদাশ বলেন, ‘যেকোনো শহর বা গ্রামগুলোতে গেলেই বিদ্যুতের ফকফকা আলো দেখতাম। মন জুড়িয়ে যেত। তখন আমাদের মতো গরিব চা-শ্রমিকদের বাড়িতে বিদ্যুৎ আসবে সেটা স্বপ্নের মতো মনে হতো। অথচ আজ আমার বাড়িতেও শহরের মতো লাইট জ্বলছে। ভাবতেই ভালো লাগছে।’
শুধু তারাই নন, আরও অন্তত ১০ জন চা-শ্রমিক এমন আনন্দের অভিব্যক্তির কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারকে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম গোলাম ফারুক মীর জানান, পরিবারগুলোতে বিদ্যুতায়নে নির্মাণ লাইনের পরিমাণ চার দশমিক ৩৭৩ কিলোমিটার। এতে মোট ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চাতলাপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘যারা এখনো বিদ্যুৎ পাওয়া বাকি আছে, তাদেরকেও যেন শিগগিরই বিদ্যুৎ দেওয়া হয়।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের ছেড়ে কোনোভাবেই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা এসব চা-শ্রমিকদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি অল্প কিছুদিনের ভেতর আমার উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে। কাউকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
Comments